Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিসানীতি পোশাক রফতানিতে প্রভাব ফেলবে না: বিজিএমইএ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৭

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দেশের পোশাক রফতানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মন্তব্য করেছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রফনিকারক সমিতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ফারুক হাসান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি যে কারোর ওপর হতে পারে। আবার আমি গত ৩০ বছর ধরে ৫ বছর করে ভিসা পাই। এরপরও আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর আমাকে বলতে পারে তোমার ভিসা বাতিল করা হলো। এভাবেও কারও ভিসা বাতিল করা হয়।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কারও ভিসা বাতিল হলেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা করোনার সময়ে কোনো দেশে যেতে পারিনি। এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সেক্ষেত্রে বলা যায় ভিসা বাতিল হলেও বিকল্পভাবে ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপর স্যাংশন দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর পেমেন্টে কয়েকটি ব্যাংকের ওপর স্যাংশন হয়েছে, তবে সেটি অন্য কোনোভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে।’

পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের প্রধান দুটি বাজার-উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে আমাদের মোট রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায়। আর এ দুটি বাজারে যে কোনো কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমাদের শিল্পে। আমরা এই ভালনারিবিলিটি কাটিয়ে উঠার জন্য বরাবরই বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরি উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ২০১০ সাল থেকে আমরা ক্রমাগত এই কাজটি করে আসছি। সর্বশেষ আমরা অস্ট্রেলিয়াতে দিনব্যাপী বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিট করেছি। সেখানে আমরা আমাদের শিল্পের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেছি।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা আশা করছি, অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের রফতানিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। আমরা আরও অনেক অপ্রচলিত বাজার নিয়ে কাজ করছি, যেমন – দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব এমন কি ইরাক। বর্তমান এই সংকটময় সময়ে নতুন বাজারে আমাদের রফতানির প্রবৃদ্ধি আমাদেরকে সাহায্য করছে।’

তিনি বলেন, ‘এরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে বাজার ধরে রাখর জন্য আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো ব্যবসা সহজীকরণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করছে। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি, আমাদের সরকারও শিল্পের স্বার্থে বিভিন্ন সময় ব্যবসাবান্ধব, রফতানিবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং শিল্প উপকৃত হয়েছে। তারপরেও আমাদের কারখানাগুলো মূল্যভিত্তিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রচণ্ড সংগ্রাম করছে। এ পরিস্থিতিতেও কাস্টমস এবং বন্ডের সমস্যাগুলো আমাদের চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। বিগত সময়ে আমরা কাস্টমস ও বন্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশকিছু সভা করেছি। তাদেরকে কাস্টমস এবং বন্ড পদ্ধতিগুলোর জটিলতাগুলো নিরসনের অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে যখনই সুযোগ পেয়েছি, তাদের কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি।’

পোশাক শিল্প ফ্যাশন ও টাইম বাউন্ড শিল্প। কাস্টমস বন্ড পদ্ধতিগুলোকে সুবিন্যস্ত করা হলে তা লিড টাইম সংক্ষিপ্ত করবে এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। আমরা দেখছি কাস্টম হাউজ এবং বন্ড কমিশনারেটে নিচের দিকের কতিপয় কর্মচারীরা সময়ক্ষেপণ করে, উদ্যোক্তাদের আর্থিকভাবে হয়রানি করে। এটির নিরসন হওয়া দরকার।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে দোষারোপ করে বিজিএমই সভাপতি বলেন, ‘আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি, সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের জারিকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি গনমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আর দেশের প্রধান দৈনিকগুলো বিভিন্ন শিরোনামে তা ছেপেছে, যেমন – ‘পোশাক রফতানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, ‘পোশাক রফতানির আড়ালে ১০ কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ এ রকম শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের চিঠি, এ ধরনের মিডিয়া রিলিজ, এ ধরনের মিডিয়া ক্যাম্পেন, আসলে কার স্বার্থে করা হয়েছে, এটা আমাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন।’

বিজ্ঞাপন

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না। শুধুমাত্র বাধাগ্রস্তই করছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনও তদন্তই হয়নি সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্পখাতকে ঘিরে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে এবং যারা সত্যিকার অর্থে কোনো ধরনের কোন অসাধু তৎপরতার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে- সেই বিষযটিই প্র্যাক্টিস হওয়া উচিত এবং এটিই কিন্তু সব জায়গায় হয়।’

‘এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই, এবং প্রত্যাখান করছি’ বলেন বিজিএমইএ সভাপতি।

যে ১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে ৪টি বিজিএমইএ এর এবং ২টি বিকেএমইএ এর সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিজিএমইএ’র ৪টি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, প্রজ্ঞা ফ্যাশন লি, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লি ও হংকং ফ্যাশনস লি। বিকেএমইএ’র দুটি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- পিক্সি নীট ওয়্যার লি ও ইডেন স্টাইল-টেক্স (বায়িং হাউজ)। আমরা আমাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর কাছে নোটিশ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি। তারা লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। কারখানাগুলোর প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত আছেন। যে উত্তরগুলো তারা দিয়েছে, আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমি আবারও বলব, যদি কেউ অভিযুক্ত হন তবে তাদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে তদন্ত করেন, প্রমাণ করেন, তারপর তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনেন। আপনারা এই বিষয়টি ঢালাওভাবে মিডিয়াতে দেওয়ার ফলে সামগ্রিকভাবে এই শিল্পটি হেয় হয়েছে, যেখানে আমরা এতকিছু করছি আমাদের সেক্টরের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য সেখানে এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বার্থানেষী মহলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা বাঞ্চনীয় মনে করছি।’

এই শিল্পের দশজন উদ্যোক্তা নিয়ে আজকে কথা হচ্ছে, এদের বাইরে আরও হাজার হাজার উদ্যোক্তা আছেন, তারা তো প্রচণ্ডভাবে হতাশ ও মর্মাহত হয়ে পড়েছেন। আগামীতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কারণ এই অভিযোগ তাদেরও স্পর্শ করছে। যেখানে এই শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ দেশের মেহনতি শ্রমিক সরকার ও উদ্যোক্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখন এরকম একটি বিষয় কেন, কিভাবে হলো, তা আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য হাই লেভেল টাস্কফোর্স গঠন করে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবী করছি। এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দিতে বিজিএমইএ প্রস্তুত।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

জাতীয়-নির্বাচন পোশাক রফতানি বিজিএমইএ ভিসানীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর