Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ বছরেও শেষ হয়নি জবি নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের কাজ

আবু সুফিয়ান শুভ, জবি করেসপন্ডেন্ট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৮

এক বছরের প্রকল্পে দুই বছর পেরিয়ে গেছে। তবু শেষ হয়নি জবির নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। ছবি: সারাবাংলা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। তবে নির্মাণকাজ শুরুর পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ না হওয়ায় মাটি ভরাট, প্রকৌশল ভবন নির্মাণসহ ভেতরের রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। জবি কর্তৃপক্ষ বারবার চিঠি দিলেও কাজে কোনো গতি আসছে না। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না হওয়াকেই তারা নতুন ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরুতে দেরির কারণ হিসেবে দায়ী করে আসছে।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। এদিকে বেশি সময় লাগায় এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তারা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে।

‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৮ সালে। তিন বছর পর প্রায় পাঁচ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে জবি কর্তৃপক্ষ। এর কয়েকদিন পরই শুরু হয় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। এরপর এক বছরের প্রকল্প দুই বছর পার করলেও কাজ শেষ হয়নি। নতুন ক্যাম্পাসের অপেক্ষাও দীর্ঘতর হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের তেঘোরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে সীমানা প্রচীর নির্মাণের কাজ চলছে। মুজাহিদনগরের প্রবেশমুখে জমি অধিগ্রহণ ও সরকারি গাছ কাটা-সংক্রান্ত জটিলতায় ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে এখনো সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। একই অবস্থা ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকেও। পদ্মসেতু রেললাইনের পাশের এই জায়গায় অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও বড় বড় পুকুর থাকায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উত্তর দিকে মুজাহিদনগরে প্রবেশের শুরুতেও এখনো শেষ হয়নি প্রাথমিক কাজ। পশ্চিম দিকে অধিকাংশ জায়গায় কাজ শেষ হলেও রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় সীমানা প্রচীর নির্মাণের কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হলেও এখনো ইট গাঁথুনির কাজ শেষ হয়নি।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, পৌনে পাঁচ হাজার মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ওই নির্ধারিত মেয়াদের পর আরও এক সেপ্টেম্বর মাস প্রায় শেষ হতে চলল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ হয়েছে মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ। সীমানা প্রাচীর না হওয়ার কারণেই আটকে আছে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অন্যান্য কাজও।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, এখন তারা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করবে। ছবি: সারাবাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য সীমানা প্রাচীর প্রকল্পের ৬৬ শতাংশ কাজ হওয়ার কথা বললেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, তারা ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। কাজে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তারা অধিগ্রহণ জটিলতার অজুহাত দিলেও তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিগ্রহণ জটিলতায় ছিল মাত্র ১১ একর জমি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই বছরে বাকি জায়গার কাজও শেষ করতে পারেনি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্ল্যানিং ভবন নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার না পাওয়ায় ক্ষোভে ধীরগতিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার পেতে চুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করলেও টেন্ডার না পাওয়ায় পরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ঠিকাদার। এ কারণেই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগায় এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করার কথা ভাবছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে চুক্তির অনুযায়ী এক বছরের প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই বলছে জবি কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সীমানা প্রাচীরের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। মুজাহিদনগরের পাশে কিছু এবং রেললাইনের পাশে এক হাজার ফিটসহ আর মাত্র সাড়ে চার হাজার ফিট অংশের কাজ বাকি আছে। জমি অধিগ্রহণের কিছু সমস্যা থাকায় আমাদের কাজে দেরি হচ্ছে। অধিগ্রহণ শেষ হলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কাজে দেরি হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ব্যয় বাড়ানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভেবেছি।’

ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি কি না— এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১১ একর জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু ঝামেলা ছিল। সে কারনো সেসব জায়গায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকায় অন্য জায়গাতেও কাজ হয়নি। অধিগ্রহণের ঝামেলা শেষের পথে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করতে পারব।’

প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাবনার বিষয়ে জবির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই ব্যয় বাড়াবে না।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দিয়ে আসছি। আমরা ঠিকাদারকে ডেকে পাঠাব। তারা যেন দ্রুত কাজ শেষ করে, সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।’

সারাবাংলা/টিআর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জবি জবি নতুন ক্যাম্পাস সীমানা প্রাচীর নির্মাণ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘আমাদের সেনাবাহিনী যেন তৈরি থাকে’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৯

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

সম্পর্কিত খবর