‘স্বাধীন থাকা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের ওপর’
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৮
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিনি বলেছেন, আমরা একটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছি। দেশের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। এই অবস্থা থেকে বের হতে না পারলে গোটা জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এই বিপদ, এই সংকট শুধু বিএনপির নয়, সমগ্র জাতির।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে স্বাধীন থাকব কিনা, আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকবে কিনা, আমার দেশ করদ রাজ্যে পরিণত হবে কিনা, আমার গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে কিনা, আমি আমার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারব কিনা- সবকিছু নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের ওপর।’
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আ স ম হান্নান শাহ’র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আ স ম হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যারা সংগ্রাম করছেন তাদের আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে, এই আন্দোলনকে রাজপথে বিস্তৃত করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে নামিয়ে আনতে হবে। সাধারণ মানুষকে যখন রাজপথে নামিয়ে আনতে পুরোপুরিভাবে সক্ষম হব, সেদিন আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে।’
দলছুট-বহিষ্কৃতদের দিয়ে দল ভাঙার অপচেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ওরা (ক্ষমতাসীনরা) রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে, এখন দল ভাঙার চেষ্টা করছে। দল কখন ভাঙতে যায়, যখন সে বোঝে দুর্বল। আজ তারা (সরকার) আমাদের দলছুট, বহিষ্কৃত লোকজনকে নিয়ে আবার দল তৈরি করে ঝামেলা করতে চায়। আমরা খুব পরিষ্করভাবে বলছি, এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। মানুষ একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় সব দলের অংশগ্রহণে। এর বিকল্প তারা কিছু চায় না।’
ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব আমরা পালন করছি। আমরা প্রায় একবছর ধরে রাস্তায় নেমেছি। এর মধ্যে আমাদের ২২ জন তরুণ যুবক নেতার প্রাণ গেছে রাস্তায় পুলিশের গুলিতে। আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে, আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী জেলে গেছে। তারপরও আমাদের দমিয়ে রাখতে পারছে না, পারবে না।’
তিনি বরেন, ‘এখন আমাদের রোড মার্চ হচ্ছে, সেই রোড মার্চগুলোতে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কিনা আপনারা দেখেন। আমি নিজে একটা রোড মার্চে ছিলাম বগুড়া থেকে রাজশাহীতে। রাস্তার দুই ধারে অগণিত পুরষ-মহিলা-নারী-শিশু এবং স্কুলের ছেলে মেয়েরা বেরিয়ে আসছে। তারা এই রোড মার্চকে স্বাগত জানাচ্ছে এবং এই সরকারের পতন চাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওরা দেশকে ভয়াবহ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আল-জাজিরার করেসপডেন্ট তার সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল কয়েকদিন আগে। তিনি বলছেন যে, আমি তো এখানে আছি, আসছি কোনো দিন ভাবিনি যে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাব। এখন চিন্তা করতে শুরু করেছি, বাংলাদেশে থাকব না। কেন? বলছেন যে, আমি একটা রেস্টুরেন্টে কথা বলতে পারব না, বিয়ে বাড়িতে কিংবা উৎসবে গিয়ে আমার মনের কথা বলতে পারব না। অর্থাৎ আমি কাদের সঙ্গে চলাফেরা করি, আমি কার সঙ্গে বসে কোন কথা বলি- সেটাও এখন নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সার্ভিলেন্সে আনা হয়। তারপরে আমার নিরাপত্তা নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বহু বুদ্ধিজীবী এখন টেলিভিশনের টকশোতে আসেন না। কারণ কি? তাদের ভয় দেখানো হয় যে, আপনারা যদি গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাহলে আপনাদের বিপদ হবে। সবচাইতে টাচি জায়গায় আঘাত করতে তারা। ছেলে-মেয়েরা যদি স্কুল-কলেজে পড়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, হুমকি দেওয়া হয় অদৃশ্য জায়গা থেকে।’
সংগঠনের সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, কৃষক দলের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক শাফিন, প্রয়াত আসম হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, স্থানীয় নেতা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা, রাশেদুল হক প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম