টানা বৃষ্টিতে ফের এডিসের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা, গা করছে না ২ সিটি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২৯
ঢাকা: কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারও শুরু হয়েছে বৃষ্টি। টানা তিন দিন বৃষ্টির পর এখন প্রতিদিনই থেমে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আবারও নতুন করে এডিস মশার প্রজনন এবং সেই সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ অবস্থাতেও গা লাগাচ্ছে না রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। মশা নিধনে তাদের আলাদা কোনো উদ্যোগ নেই।
মশা বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রাণী ধর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই রোদ, এই বৃষ্টি— এমন আবহাওয়ায় মশার প্রজনন বেড়ে যায়। কারণ বৃষ্টির জমা পানিতে মশা ডিম পাড়ে। এটি যদি পানি থাকা অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপ নাও নেয়, পরে পানি পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ণবয়স্ক মশা জন্ম নেয়।’
মশার প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি ইন্দ্রাণী বলেন, ‘সাধারণত তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ও শুষ্ক দিনে বাইরে থাকা পানি শুকিয়ে গেলেও মশার ডিম মরে না। পরে আবার পানি পেলে এসব ডিম থেকে লার্ভা ও পরে মশা বের হয়। পাঁচ বা ১০ দিন পর পানি পেলেও এসব ডিম থেকে মশা বেরিয়ে আসবে। সাধারণত ডিম পাড়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে লার্ভা বের হয়। এই লার্ভা পর্যাপ্ত পানি পেলে স্বভাবিক সময়ে লার্ভায় পরিণত হলেও পানি শুকিয়ে যেতে দেখলে রূপান্তরের সময় কমিয়ে ফেলে দ্রুত পিউপা স্টেজে চলে যাবে। আর পিউপা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে আরও তিন থেকে চার দিন লাগে। এভাবে ডিম থেকে মশা হতে ১১ থেকে ১৪ দিনের মতো লাগে। এখন এই বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
সেক্ষেত্রে এখনই ডেঙ্গু নিধনে উদ্যোগী হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন এই মশা বিশেষজ্ঞ। বলছেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে এখনই দরকার জরুরি পদক্ষেপ। এখন পূর্ণবয়স্ক মশা বেরিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। তাই এখনই অ্যাডাল্টিসাইডিং (পূর্ণবয়স্ক মশা নিধন) করতে হবে। পাশাপাশি লার্ভিসাইডিং (লার্ভা নিধন) তো চলবেই।’
এ পরিস্থিতিতে মশা নিধনে আগাম কোনো বিশেষ কার্যক্রম নেওয়ার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। বর্ষা মৌসুমের নিয়মিত কার্যক্রমকেই যথেষ্ট মনে করছেন তারা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দেড় বা দুই সপ্তাহ পর ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে এখনই সতর্ক হতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টির জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ যেন না বাড়ে, তাই তদারকি বাড়ানো হয়েছে।
এছড়াও ডেঙ্গু প্রতিরধে জনগণের কাছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন দিয়ে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রের তথ্য জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র।
মশা নিধন নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সেলিম রেজা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ— এমন আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে এডিস মশার প্রকোপ বাড়তে পারে। তবে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছি। এ ছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা দিলে আমাদের কর্মীরা সাধারণত একটু অ্যালার্ট থাকে।
সিটি করপোরেশন খুব একটা গা না করলেও এ বছর ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৪৩ জন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৮১ জন। আর দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৮৫৩ জনের। সে হিসাবে এ বছরের প্রথম ৯ মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু আগের ২২ বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে এ পর্যন্ত এক লাখ ৯৩ হাজার ৮৮১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। এর মধ্যে ঢাকায় ৮০ হাজার ৪৯০ জন এবং ঢাকার বাইরে এক লাখ ১৩ হাজার ৩৯১ জন।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
এডিস মশা ডিএনসিসি ডিএসসিসি ডেঙ্গু ডেঙ্গু রোগী মশা নিধন সিটি করপোরেশন