Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!

আমজাদ হোসেন মিন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:১৫

বগুড়া: যোগদানের পর প্রায় অর্ধ কোটি টাকা সরানোর অভিযোগ উঠেছে সরকারি সোনাতলা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (পূর্ববর্তী নাম সোনাতলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে এলপিআরে যাওয়ার আগের ৮ মাসেই ব্যাংক থেকে তিনি উত্তোলন করেছেন ৪০ লাখ ১১ হাজার ৯৯৫ টাকা। এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানার চেষ্টা করলে তারা কোনভাবেই সাড়া দেয়নি। এমনকি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো সাংবাদিক ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণাও দেয় কর্তৃপক্ষ!

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০১৫ সালেও প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির নির্বাচিত মহিলা সদস্য কুলসুম বেগম ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও উপ-সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেছিলেন। কিন্তু অর্থ ও ক্ষমতার দাপটে তা ধামাচাপা পরে যায়।

এ বিষয়ে কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমি অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে নেতা-নেত্রীদের চাপে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছি। এই প্রধান শিক্ষক একজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অসংখ্যা অভিযোগ আছে। এসব থেকে যদি বের হয়ে না আসা যায় তাহলে এই স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রসাতলে চলে যাবে।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এক্সিম ব্যাংক সোনাতলা শাখা থেকে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ৪,৮৩,৪৪৮ টাকা উত্তোলন করা হয়। একইদিন ইসলামী ব্যাংক সোনাতলা শাখা হতে ৩,৩১,৫০০ টাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি এক্সিম ব্যাংক হতে ৩,৪৪,৫৭১ টাকা, ২২ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ টাকা, ৭ মার্চ ৩,৯১,৫২৯ টাকা, ২১ মার্চ ৪৮ হাজার টাকা, ৯ এপ্রিল ৩,৪০,৬১০ টাকা, ১৮ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংক সোনাতলা শাখা হতে ১ লাখ টাকা, ১৮ মে ইসলামী ব্যাংক হতে ১,৪৮,৯৫৮ টাকা, ৭ জুন ইসলামী ব্যাংক হতে ২,১৭,২৮৯ টাকা, ১৪ জুন এক্সিম ব্যাংক হতে ১ লাখ টাকা, ৫ জুলাই এক্সিম ব্যাংক হতে ৩,৫৩,৪৫৩ টাকা, ১৭ জুলাই এক্সিম ব্যাংক হতে ২,৪৫,০০০ টাকা অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান উত্তোলন করেছেন।

এছাড়া ২ আগস্ট এক্সিম ব্যাংক থেকে ৩৮,৫১০ টাকা, ৬ আগষ্ঠ এক্সিম ব্যাংক হতে ১,৯০,৮০০ টাকা, ২২ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংক হতে ৫০,০০০ টাকা, ২৩ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংক হতে ৭৪,০০০ টাকা, ২৭ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক হতে ৪,৪৯,০০০ টাকা ও ২৮ আগষ্ট অগ্রণী ব্যাংক হতে ৫০,০০০ টাকা উত্তোলন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখিত অর্থের মোট অংক ৪০,১১,৯৯৫ টাকা।

তবে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যায়ের হিসাবে দেখা যায়, প্রতি মাসে শিক্ষক/কর্মচারী খণ্ডকালীনদের বেতন ৪৫,০০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল বাবদ আনুমানিক ৩,৫০০ টাকা, ইন্টারনেট বিল ১৫০০ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ৫,০০০ টাকা ও অন্যান্য ৫,০০০ টাকাসহ মোট ৬০ হাজার টাকা ব্যায় হয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানের ভেতরে শিক্ষক-কর্মচারীরা কোয়ার্টারে বসবাস করলেও তা খালি অবস্থায় থাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু বসবাসরতদের কাছে থেকে উত্তেলান করা অর্থ অভিযুক্ত মতিয়ার রহমান তার নিজ পকেটে ভরেন। এছাড়া ছাত্র ভর্তির সেশন চার্জ আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না।

নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব রেজিস্ট্রার ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখানে স্কুল ও কলেজ শাখার হিসাব রেজিস্ট্রার একত্রেই করা হয়েছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।

অভিযুক্ত মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী মো. মোকছেদা বানুকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়মানুসারে নিয়োগবোর্ডের সদস্য সচিবের স্ত্রী কোনোভাবেই নিয়োগ পাবার কথা নয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান অধ্যক্ষ জি এম আহসান হাবিব ও সহকারী শিক্ষক মো. মানিক মিয়া বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এসব তথ্য দিতে পারবো না।’

কর্তৃপক্ষ কারা জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ডিজি মহোদয়’।

বর্তমান অধ্যক্ষ জি এম আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি, তাই এসব হিসাব আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আর অনিয়ম যদি হয়ে থাকে তাহলে এসব করেছে আমার পূর্বের অধ্যক্ষ সাহেব এবং তার সাথে যুক্ত ছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা। কারণ তার স্বাক্ষর ছাড়া টাকা উত্তোলন করা সম্ভব নয়।’

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক (অধ্যক্ষ) মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। এসব অর্থ উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানের কাজ করেছি।’

কি ধরনের কাজ করা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চলে এসেছি তাই বিগত দিনের তথ্য আমার পক্ষে দেওয়া এবং বলা সম্ভব নয়। এসব তথ্য বর্তমান প্রধান শিক্ষক দেবেন।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো কিছু অনিয়ম হয়েই থাকে তাতে ঘাবড়ালে চলবে না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, ‘একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে ৪০ লাখ টাকা থাকবে এটা কল্পনাতীত। এই প্রতিষ্ঠানে কখনোই ৪০ লাখ টাকা ছিল না।’

এ সময় ব্যাংক স্টেটমেন্টের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক স্টেটমেন্ট ভুয়া হতে পারে। কারণ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে এতো পরিমান টাকা থাকার সুযোগ নেই।’

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই বিষয়টি জানি না। তবে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে থেকে বিষয়টি জেনে তদন্ত সাপেক্ষ দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এমও

টাকা আত্মসাৎ প্রধান শিক্ষক সোনাতলা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর