সেতু পাচ্ছে সাঙ্গু নদী
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১০
ঢাকা: চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাঙ্গু নদী। চট্টগ্রামের বেশকিছু এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও এই নদী চান্দনাইশ উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে সাতকানিয়া উপজেলা থেকে। চান্দনাইশ থেকে চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক নিকটবর্তী হলেও নদীর কারণে সহজগম্য নয়। সাতকানিয়া, লোহাগড়া উপজেলাতেও যেতে হয় ঘুরপথে।
চান্দনাইশ উপজেলাকে আরও সহজ যোগাযোগের মধ্যে আনতে সাঙ্গু নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনে এই সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ করা হলে চান্দনাইশ থেকে চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কসহ সাতকানিয়া-লোহগড়া যাতায়াতের বিকল্প পথ তৈরি হবে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভ্রমণ দূরত্ব কমবে উপজেলার বাসিন্দাদের।
প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে চন্দনাইশ উপজেলার গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এই সেতু হলে কৃষিপণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়বে। গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে শহরের নাগরিক সুবিধা গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চন্দনাইশ উপজেলা চট্টগ্রাম জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। চন্দনাইশ উপজেলার ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি চলমান রয়েছে। প্রস্তাবিত সেতুটি চন্দনাইশ উপজেলার একটি বড় অংশের সঙ্গে বান্দরবান জেলার এবং চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক ও চন্দনাইশ উপজেলা, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলা হয়ে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এটি এলাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতায় প্রভাব ফেলবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, চান্দনাইশ উপজেলা অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে অনেক উন্নত। জেলার সঙ্গে চন্দনাইশ উপজেলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের আরও প্রসারে সেতুটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সেতুটি উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করে প্রকল্প এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করবে। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেওয়া প্রয়োজন এবং তা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযোজন করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য ভায়াডাক্টসহ ৯৫০ কিলোমিটার হওয়ায় প্রকল্পটি লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের প্রকল্পের ইআইএ সম্পন্ন করে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরুর আগে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়। তাই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে নতুন করে ডিপিপি প্রণয়ন করতে হবে।
এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স অনুযায়ী সেতুর উচ্চতা ও নকশা ডিপিপিতে সংযোজন করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া যে সড়কে সেতুটি নির্মাণ করা হবে, তার আইডি নম্বরও ডিপিপিতে রাখতে বলা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আউটসোর্সিং সেবা খাতে ৪৮ মাসের জন্য দুই কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। আউটসোর্সিং সেবা ও কর্মকতা বা কর্মচারীদের পদ, সংখ্যার তথ্যসহ অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশের জন্য জনবলের বেতন ভাতা ডিপিপিতে থাকা প্রয়োজন বলে পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে।
পেট্রোল, ওয়েল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৩০ লাখ টাকা, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ১৩ লাখ টাকা, ভ্রমণ খাতে ২০ লাখ টাকা, কম্পিউটার সামগ্রী খাতে ১০ লাখ টাকা, অন্যান্য মনিহারি খাতে ২৪ লাখ টাকা এবং মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এসব ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো প্রয়োজন। এ ছাড়া নকশা বা অবকাঠামো অনুমোদন ফি খাতে ১০ লাখ টাকার প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তাও জানতে চাওয়া হয় পিইসি সভায়।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর