ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অভিযাত্রায় উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার থাকবে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনকে মূল ভিত্তি ধরে থাকবে কৃষি, সেবা ও শিল্পোৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভায় এমন তথ্য জানান নেতারা। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই ইশতেহারে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার গত পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রায় নিতে সক্ষম হয়েছে বলে সভায় উল্লেখ করেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আমাদের অনেক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমাদের অর্থনীতির ওপর চরম আঘাত এসেছে। সেটি কাটিয়ে উঠতে আমরা বেশ কঠিন মুহূর্ত অতিক্রম করছি।
এ পরিস্থিতিতে আরেক নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহারে কী গুরুত্ব পাবে, সে কথা তুলে ধরে ড. রাজ্জাক বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ শুরু করেছিলাম। আজ সারাদেশে ইন্টারনেট সুবিধা ছড়িয়ে গেছে। সবাই এর সুবিধা পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে আগামী দিনে আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে টিকিয়ে রাখব এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকব, এগুলো আমাদের চিন্তা করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল, এবার আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা ভাবছি। এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে আসবে।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করার পাশাপাশি সুপারিশ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ড. রাজ্জাক। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের অর্থনীতির তিনটি দিককে সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এগুলো হলো— কৃষি খাত, সেবা খাত এবং শিল্পোৎপাদন খাত। এই তিনটি খাতই গুরুত্ব পাবে। আমরা জানি, কৃষি খাতের অবদান মোট জিডিপিতে কমে আসছে। কিন্তু কৃষির গুরুত্ব কমছে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, কাঁচামাল সরবরাহ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা করার জন্য কৃষির গুরুত্ব কমছে না। কাজেই কৃষির ওপর গুরুত্ব অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সেবা খাত কিংবা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতের গুরুত্বও অপরিসীম। তাই খাতগুলোর গুরুত্ব ইশতেহারে থাকবে। আর মূল ফোকাস হবে শিল্প খাত তথা উৎপাদন খাতকে প্রসারিত করা। এই উৎপাদন খাতে ছোট ছোট শিল্প কলকারখানার সঙ্গে ভারী শিল্পের দিকে আমাদের যেতে হবে। এই তিনটি খাততে গুরুত্ব দিয়েই প্রধানমন্ত্রী এক শ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছেন। সেখানে সব অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটি হবে আগামী দিনে মূল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইশতেহারে সুশাসন ও গণতন্ত্রের অঙ্গীকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের জাতীয় সংসদ হবে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের গণমাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ বড় ভূমিকা পালন করে। এই তিনটি মিলিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা গুরুত্ব দেব। সর্বোপরি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করার অঙ্গীকার থাকবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা গতবারও নির্বাচনি ইশতেহার করেছি। কিন্তু ইশতেহার পড়ে কয়জন! সেটি খেয়াল রেখে ইশতেহার করা দরকার। বুলেট পয়েন্টে পড়েন কিছু। ঢাউস পরিকল্পনা নিয়ে বিশাল পুস্তক রচনার প্রয়োজন নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ভোগাচ্ছে। আমাদের এখানে এখন এই বৃষ্টি, এই রোদ ঝলমলে দিন। কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। পৃথিবী পাল্টে গেছে। জীবনের চালচিত্র বদলে গেছে। কাজেই আমাদের এখানে সময়ের সঙ্গে, বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে হবে। সামনে চ্যালেঞ্জ, কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। ক্ষমতায় থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আবারও ক্ষমতায় থাকতে চান। কারণ ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় গেলে আমেরিকার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই বয়স উপেক্ষা করেই ক্ষমতায় থাকতে চান বাইডেন। আমিও আজ একই কথা বলি— বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। এই স্পিরিটটাই আমাদের ধরে রাখতে হবে।
ইশতেহার সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় করার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, মাথায় রাখতে হবে ২০৪০ সাল। ডিজিটাল হয়ে গেছে, এখন মাথায় স্মার্ট বাংলাদেশ। এই স্মার্টনেসটা কীভাবে আসবে, কীভাবে বিকাশ ঘটবে, কীভাবে প্রসার ঘটবে— সেই চিন্তা করতে হবে। বিশাল পুস্তিকা তৈরি করে লাভ নেই। মূল পয়েন্টে মোদ্দাকথাগুলো তুলে আনুন। বেশি কথা পড়ার মতো কারও সময় নেই।
‘সংকটে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এবং এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জন্মকালের চেতনাকে ধারণ করার জন্য শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আছে কি? সেটি আামদের ভাবতে হবে এবং ওই আলোকে এই ইশতেহার সাজাতে হবে,’— বলেন ওবায়দুল কাদের।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন কমিটির সদস্যসচিব এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। সভায় ইশতেহার কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. বজলুল হক খন্দকার, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. শামসুল আলম, ডা. দীপু মনি, শ ম রেজাউল করিম, শেখর দত্ত, ড. মাকসুদ কামাল, সাজ্জাদুল হাসান, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ওয়াসিকা আয়েশা খান, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সায়েম খান, সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সাব্বির আহমেদ।