Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ট্রায়াল রান অক্টোবরে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:২৭

ঢাকা: প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর নির্মাণ কাজ শুরু হয় সাত বছর পর। এরপরও পরিবর্তন হয়েছে নকশা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার। ১৮০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্প ঠেকেছে ১৮ হাজার কোটিতে। তবু শেষ হয়নি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর একটি ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।’

উদ্যোগ নেওয়ার পর এক যুগ আর কাজ শুরুর পাঁচ বছর পর এসে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতে তারা আসছে অক্টোবরেই ওই রেলপথ দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালাতে চান।

বিজ্ঞাপন

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১১ সালে। ওই বছরের ৩ এপ্রিল দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেলপথ ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরও ১২ কিলোমিটার।

২০১১ সালে ওই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। শুরুতে ডুয়েল গেজ ও সিংগেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। তবে কাজ শুরুর আগেই ২০১৬ সালে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। বদলেছে নকশা। যে কারণে এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এই পথে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগোচ্ছেন তারা। আর সে লক্ষ্য সামনে রেখেই অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই জোড়া ট্রেন পরীক্ষামূলক চালাতে চান তারা।

বিজ্ঞাপন

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্প গ্রহণ করার সাত বছর পর কাজ শুরু হয়। এ কারণে সময়টা অনেক বেশি দেখাচ্ছে। আসলে কাজ শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মহামারি পরিস্থিতি ছিল। সব মিলিয়ে কাজ শেষ করা যায়নি।’

প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি জানিয়ে মফিজুর রহমান বলেন, ‘১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটারে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। বাকি কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে। অক্টোবরেই এ রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের জন্য ছয়টি বগি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ সব বগিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন দিয়ে ফার্স্ট ট্রায়াল হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ট্রায়াল সফল হলে অক্টোবরেই প্রকল্প উদ্বোধনও করতে চান সংশ্লিষ্টরা। তবে তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক করা হয়নি।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের যেসব কাজ শেষ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৩৯টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। ১০০ কিলোমিটার এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ৯টি, এর মধ্যে ছয়টির নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ। বাকি তিনটি স্টেশনের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটি আরও বিস্তৃত হয়ে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত টেনে নিয়ে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

মূল উদ্দেশ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দ্রুতগতির টুরিস্ট ট্রেন চালু করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। তবে প্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার অংশটুকুই এখন নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এখনই নির্মাণ করা হচ্ছে না।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

কক্সবাজার দোহাজারী রেলওয়ে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর