২০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিবি-বাসদ
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৩৮
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বামপন্থি ধারার ৯টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে মনে করলে ৩০০ সংসদীয় আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই জোটের।
জোট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সিপিবি ও বাসদ তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে। ভোটে গেলে দুটি দলই ১০০টি করে আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তবে সিপিবি, বাসদ বা বাম জোটের পক্ষ থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথাই বারবার বলা হচ্ছে।
জোটের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে বাম গণতান্ত্রিক জোট প্রায় সব আসনেই প্রার্থী দেবে। একইসঙ্গে ঢাকায় করা হবে শোডাউন। অক্টোবরের শেষের দিকেই ঢাকায় মহাসমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। মহাসমাবেশের জন্য থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রস্তুতিও চলছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংলাপও রয়েছে আলোচনায়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করতে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে ইস্যুভিত্তিক আলোচনার জন্য ডাকলে বামগণতান্ত্রিক জোট পরিস্থিতি বুঝে সেই আলোচনায় অংশ নেবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে জোটটি। সংলাপে গেলেও তারা এই আন্দোলন থেকে সরে যাবে না। এমনকি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন বা অন্য কোনো জোটেও তারা অংশ নেবে না। নিজেদের জোটে থেকেই নির্বাচনে যাবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক জোট ১৫০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল ৮০টি আসনে। তবে সিপিবিসহ জোটের কোনো প্রার্থীই নির্বাচনে জয় পাননি। বাম জোটের নেতারা মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলে তাদের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেতেন। ভোট সুষ্ঠু হয়নি বলেই তাদের কোনো প্রার্থী জয় পাননি।
জাতীয় নির্বাচনে বাম দলগুলোর জয়লাভের ইতিহাস অবশ্য কখনোই সমৃদ্ধ নয়। জোটের বৃহত্তম এবং দেশের বাম ঘরানারও বৃহত্তম দল সিপিবির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই কথা। কেবল গত নির্বাচনেই নয়, মাত্র দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া আর কোনো নির্বাচনেই তাদের কোনো প্রার্থী জয় পাননি। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এবং ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবির পাঁচজন করে প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর আর কোনো নির্বাচনে সিপিবির প্রতীকে কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য হননি।
নির্বাচনে জয় না পাওয়ার বিষয়ে ভোট ভাগাভাগির হিসাবকে দায় দিয়ে থাকেন সিপিবি নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘আমাদের ভোটগুলো নৌকায় অর্থাৎ আওয়ামী লীগে চলে যায়। কারণ ভোটাররা মনে করেন, কাঁচি মার্কায় (সিপিবির প্রতীক) ভোট দিলে ভোট ভাগাভাগি হয়ে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী জিতে যেতে পারে। সে কারণে আমাদের ভোট নৌকায় চলে যায়। তাই নির্বাচনে কাঁচি মার্কার প্রার্থীদের জয় পাওয়া হয় না।’
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জনগণের স্বার্থের দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে রয়েছি। বিশেষ করে জনগণের ভোটাধিকারে জোর দেওয়া হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট আন্দোলন-সংগ্রম চারিয়ে যাচ্ছে। এই জোটের পরিধি আরও বাড়বে।’
পরিস্থিতি হলে নির্বাচনে যাওয়ার কথা জানিয়ে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে রাজনীতি নিয়ে চলমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক টানাপোড়েন খেয়াল রেখেই আমরা সামনে এগুচ্ছি। তবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে বাম গণতান্ত্রিক জোট বৈঠক করে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনে অংশ নেবে না।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকে আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতসহ অন্যান্য দাবিতে জেলা ও থানা পর্যায় আন্দোলন অব্যহত রেখেছি। অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বাসদের পক্ষ থেকে ১০০টি আসনে প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে। আর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে ভোটে যাব না।
সংলাপের বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, সে বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ডাক পড়লে আমরা সেখানে যাব।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাসদ সিপিবি