Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৫৫

ঢাকা: ‘শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুলে অ্যান্ড কলেজের সামনে আয়োজিত ‘শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

দ্রব্যমূল্য, মজুরি কমিশন, জাতীয় বেতন স্কেল, ন্যূনতম মজুরি, শ্রমিক পরিস্থিতি ও সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই কনভেনশন আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ। এতে ২০টি সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

ভয়েস অব আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে শেখ হাসিনা কিছু কথা বলেছেন। তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। যে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার কথা তারা বলে, সেই টাকা এখন ৮ কোটির ওপরে চলে গেছে, ব্যাংকে জমা আছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন।’

এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সংকটজনক অবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখে তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার একটা ভয়াবহ দানবের সরকার, লুটেরা সরকার, বর্গীদের মতো সরকার। এরা সম্পদ বিদেশে পাচার করে বাড়ি-ঘর বানাচ্ছে। আর আমার দেশে মানুষ অসহায় ও অভুক্ত থাকছে। তারা এরকম একটা ভয়াবহ রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এটাকে রাষ্ট্র বলা যায় না, এ দেশ আওয়ামী লীগের নির্যাতনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এই রাষ্ট্র পরিবর্তন করতে হবে, এর কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এক দফার আন্দোলন করছি, গণতন্ত্র হরণকারী, মানুষ হত্যাকারী এই শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।’

শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই শ্রমিক শ্রেণিই অতীতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। আমি বিশ্বাস করি এবারও শ্রমিকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমরা এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে সক্ষম হব, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হব।’

জেএসডির আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘অনেকে আল্টিমেটাম দিচ্ছে যে, আমাদের রাস্তায় নামতে দেবে না। আমরা কিন্তু এখনও আল্টিমেটাম দেইনি। যখন দেব, তখন পরিস্থিতি কি হবে জানি না। তবে আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জনগণ ধরলে কেউ রক্ষা পাবেন না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই সরকার নড়বড় করতেছে। দেশে-বিদেশে কোথাও তারা জায়গা পাচ্ছে না। সকলে মিলে আমরা জোরছে একটা ধাক্কা দিলে এই সরকারের পতন হবে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আপনারা ভালো আছেন? জানি ভালো নাই। আপনারা যাতে ভালো থাকতে পারেন সেজন্য আজকের এই কনভেনশন। দেশের জনগণের পেটে ভাত নাই। আর আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বাড়ি ভার্জিনিয়াতে। ৩০ একর জমি নিয়ে গলফ মাঠ দিয়ে সেই বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বোঝেন এই লুটেরা সরকারের নমুনা।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এই সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে। এটা আর মেনে নেওয়া হবে না। রাজপথের আন্দোলন জোরদার করে এদের পতন ঘটাতে হবে।’

জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস বলেন, ‘এই রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও এটি একটি শোষণের যন্ত্র। এই রাষ্ট্রের শোষকরা শ্রমিকদের শোষণ করে। সেজন্য এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে নতুন এই রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করতে হবে। এটাই হোক আজকে আমাদের শপথ।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘লুটেরা নয়, শ্রমিক-কর্মচারী-মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শ্রমিক ভাইয়েরা ঐক্যবদ্ধ হোন। এই কনভেনশনের উদ্দেশ্যে হচ্ছে সমগ্র শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটানো। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই।’

শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন আয়োজন কমিটির সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার ও মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় কনভেনশনে বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, জাতীয় শ্রমিক জোটের মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দ, শ্রমিক ফেডারেশনের শাহ মো. আবু জাফর, বিএনপির মজিবুর রহমান সারোয়ার, আবদুস সালাম আজাদ, হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ জামান মোল্লা, আমিনুল হক, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, সুমন ভুঁইয়া, শাহ আলম রাজা, সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের এএম ফয়েজ হোসেনসহ অনেকে।

শ্রমিক ফেডারেশন, সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি, শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিক কল্যাণ মজলিস, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিক্স ও মিশুক চালক ইউনিয়ন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদ, শ্রমজীবী পরিষদ, ভাসানী শ্রমিক পরিষদ, প্রভৃতি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সংহতি প্রকাশ করে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/এজেড/এমও

খালেদা জিয়া টপ নিউজ প্রতিহিংসা প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর