ভিসানীতি: সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৪০
ঢাকা: ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপরও ভিসানীতি প্রয়োগ হতে পারে বলে সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে চিঠি দিয়েছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পিটার হাস।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সম্পাদক পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সই করা এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের এক সাক্ষাৎকারে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন- রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাবেক-বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমও আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে।
টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পিটার হাসের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম গত ২৭ সেপ্টেম্বর ই-মেইলে একটি চিঠি পাঠান মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে।
চিঠিতে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উপরোক্ত মন্তব্যে বিষয়ে তার মনে এবং সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়ায় তিনি চিঠি লিখছেন। সত্যি বলতে কী, এই মন্তব্য আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, আমাদের অনুরোধ থাকবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু মার্কিন সরকার এবং রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সবসময় স্বাধীন ও স্বাধীন গণমাধ্যমের অবিচল সমর্থক, তাই এই মন্তব্য তাদের বিচলিত করেছে।’
ভিসা বিধিনিষেধ ‘তাদের কর্ম ছাড়া অন্য কিছুর উপর ভিত্তি করে নয়,’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে আনাম বলেন, গণমাধ্যমের ‘কাজ’ লেখা বা সম্প্রচার করা। তিনি জানতে চেয়েছেন যে একজন সাংবাদিক যা লেখেন বা সম্প্রচার করেন তার উপর ভিত্তি করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা হবে কিনা।’
যদি তাই হয়, ‘তাহলে এটা কি ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ এবং ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা’র আওতায় পড়ে না? গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে?’ চিঠিতে জানতে চেয়েছেন আনাম।
আনাম আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য সবসময় অনুপ্রেরণা ও অনুকরণের উৎস হিসেবে কাজ করেছে।’ সেক্ষেত্রে ভিসানীতি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে প্রথম সংশোধনীর মূল্যবোধ কীভাবে প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এর জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে চায়, তাদের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে পিটার হাস বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম—সবার। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে।’
পিটার হাস বলেন, ‘অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ওই বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে ভিসা নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়, এমন যেকোনো বাংলাদেশির জন্য প্রযোজ্য। গণমাধ্যমকে কেউ মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নিলে তার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে এবং ২২ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করে যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/পিটিএম