Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে কেন?


১৫ মে ২০১৮ ১৮:২৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলেও, ইসরায়েল নীতির তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখতে ইসরায়েলকে বেছে নেয় দেশটি।

১৯৭৩ সালের দিক থেকে প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সহায়তা করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতির দিকে এগিয়েছে। ইসরায়েলের সব ধরনের সিদ্ধান্ত ও নীতিকে সমর্থন দিয়ে সেসবের বাস্তবায়নে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে পাশে থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এসব সহায়তার মধ্যে আর্থিক ও কূটনৈতিক সহায়তাকে সব সব থেকে বড় করে দেখা হয়। কিন্তু ভাতৃত্বসুলভ এই সহায়তার পিছনে কারণগুলো কি কি?

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধ চলার সময় মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ‘কী বাফার’ রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তখন থেকে অব্যাহতভাবে সেই সমর্থন চলছে।

মুখে গণতন্ত্র ও জিহাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বন্ধুত্বের কথা বললেও দেশ দুটির বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি ‘সুপার পাওয়ারে টিকে থাকতে একে-অপরের প্রয়োজনীয়তা’। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিকাশ, তা মূলত দেশটির অর্থনীতি ও প্রযুক্তির উপর ভর করে গড়ে ওঠেছে। নতুন তথ্য, জ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন জ্ঞান, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য ভাবে এগিয়ে গেছে।

১৯৫৬ সালের সুয়েজ যুদ্ধেও ইসরায়েলের প্রতি তেমন বন্ধুত্বপূর্ণমনোভাব ছিলো না দেশটির। যদিও তখন দেশটির অন্য দুই মিত্র যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে মিশরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।

প্রচারণা এবং অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলের নাগরিকদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সহানুভূতি বেড়েছে।

অধ্যাপক জন মেয়ারশেইমার এবং স্টিফেন ওয়াল্ট এই দুই দেশের সম্পর্কের ফ্যাক্টর হিসেবে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এআইপিএসি) প্রতি ইঙ্গিত দেন। তবে ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের পারমাণবিক চুক্তি ব্যর্থ হবার পর এআইপিএসির কার্যকারিতা প্রশ্ন ওঠে।

দেশটির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল প্রতি বছর ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ভেটোর অর্ধেকই দেয়া হয়েছে ইসরাইলের বিপক্ষের সব ধরনের রেজ্যুলেশন আটকে দিতে।

ওবামা প্রশাসনের ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ভিতরে ভিতরে পুড়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে যান নেতানিয়াহু।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের ২৩ মে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেরুজালেম সফর করেন তিনি। এরপর ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে রীতিমতো আগুনে ঘি ঢেলে দেন।

 

এতে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব আবারও চরমে ওঠে। শুরু হয় সংঘর্ষ এবং সহিংতা। ট্রাম্পের ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত এই সংঘর্ষে প্রায় ৩ শতাধিক প্রাণ হানি হয়েছে। গত ৫ মার্চ হোয়াইট হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন নেতানিয়াহু। সেখানে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়ে মত দেন তিনি।

ইসরায়েল প্রসঙ্গে ওবামা ও ট্রাম্পের এই সুক্ষ্ম কিন্তু স্পষ্ট পার্থক্যই যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থীদের সঙ্গে দলীয় রাজনীতি বিশেষ করে রিপাবলিকানদের দূরত্বকে নির্দেশ করছিলো। যদি ডেমোক্রাটরা স্বভাবগত ভাবে ইসরাইলের সমালোচনা করতো, তাহলে ইসরাইলও তাদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক আচরণ করতো।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক শক্তিশালী হয় স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। ভূ-রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার বন্ধু ইরান, সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো রাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে আধিপত্য বিস্তারের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল রাষ্ট্রের মতো একটি বন্ধু পাওয়াটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

এই সম্পর্কের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি লবি ও ধর্মীয় বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক দেলোয়ার আরও বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে ইসরায়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। মিশর, জর্ডান, সিরিয়া এবং ভূমধ্যসাগরে প্রভাব বিস্তার করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এসব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্ক বর্তমান রূপ পেয়েছে।’

ব্যক্তি ট্রাম্পের মনোস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক দর্শনের নেতিবাচক প্রভাব বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্পের সাইকোলজিক্যাল ডিসওর্ডার ও জ্ঞানশূন্যতার কারণে স্পর্শকাতর বিভিন্ন ইস্যুগুলো চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে এসে আরও ভয়ানকভাবে সমস্যাগুলোকে উসকে দিয়েছে। যেমনটা আমরা দেখেছি ন্যাটো, চীনের ক্ষেত্রে। ইসরায়েল পলিসির যে নাটকীয়তা আমরা লক্ষ্য করছি সেখানে বিশেষ ব্যক্তিত্বের প্রভাব রয়েছে।’

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও জাতিসংঘের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার উপর জোড় দেন এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘ ট্রাম্পের ব্যক্তি সিদ্ধান্ত মার্কিন ফরেন পলিসিকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তাদের রিকগনিশন প্রয়োজন। আমেরিকার আদিপত্যবাদী নীতি থেকে সরে আসতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে এখন মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘেও শক্তি ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। এই ভারসাম্য যখন আরও শক্তিশালী হবে তখন বর্তমান অবস্থা থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থার যাওয়ার প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আসবে।’

সারাবাংলা/এমআইএস/জেডএফ

ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর