বোর্ডে ওঠেনি ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব, চূড়ান্ত হতে পারে নভেম্বরে
১ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:২২ | আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৫৮
ঢাকা: নিম্নতম মজুরির বোর্ডের তৃতীয় বৈঠকেও পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব ওঠেনি। শ্রমিক পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি দাওয়া উপস্থাপন করা হলেও ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি। চলতি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে দুই পক্ষকেই প্রস্তাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি।
রোববার (১ অক্টোবর) রাজধানীর তোপখান রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের অফিসে সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সমন্বয়ে গঠিত নিম্নতম বোর্ডের ৩য় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান (সিনিয়র জেলা জজ) লিয়াকত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বোর্ডে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান এবং শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম শ্রমিক পক্ষ আজ প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। কিন্তু কেন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেনি, তা বুঝতে পারছি না। তবে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি অনেক দাবি দাওয়া তুলে ধরেছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২২টি শ্রমিক সংগঠন যে প্রস্তাব দিয়েছে, আমরাও তা মিটিংয়ে তুলে ধরেছি। আর মালিকপক্ষ সব শুনেছে। তারা বৈঠকের দাবিদাওয়ার বিষয়গুলো বুঝে গেছে। সব শেষে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান আক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে উভয় পক্ষকে প্রস্তাবনা তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ, তৃতীয় বৈঠকও হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আশা করছি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ ১৮ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উভয় পক্ষই প্রস্তাব তুলে ধরবে।’
আরও পড়ুন: পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ছে নির্বাচনের আগেই
নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বৈঠকের বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ আমরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেছি। তবে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে পারিনি। আগামী বৈঠকে আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করব। বৈঠকটি অক্টোবরের ১৫ তারিখের পরে ১৭, ১৮ অথবা ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে পারে।’
জানা গেছে, সভায় শ্রমিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। এ সময় সব পক্ষ তাদের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি ও মতামত উপস্থাপন করে। তবে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ নিম্নতম মজুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে না পারায় সময় চেয়েছে। পরে সভায় তাদের প্রস্তাবনা বোর্ডের কাছে উপস্থাপন করবেন এবং নিম্নতম মজুরি বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। যার ভিত্তিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি হার নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, নির্বাচনের আগেই দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন বাড়ছে। বর্তমানে ন্যূনতম আট হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন তারা। শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার দাবি রয়েছে। পোশাক কারখানার মালিকরাও মজুরি বাড়ানোর পক্ষে রয়েছেন। তবে বেশ কয়েকজন মালিকই জানিয়েছেন, ন্যূনতম মজুরি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব না।
বর্তমানে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নতুন এই মজুরি ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, শ্রমিকের মূল বেতন ৪১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ১০৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়ত ভাতা ৬০০ টাকা এবং বাকি টাকা খাদ্য ও অন্যান্য খাতে ধরা হয়।
এর আগে, ২০১৩ সালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৩০০ টাকা। শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মজুরি কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসাবে সেপ্টেম্বরেই নতুন মজুরি নির্ধারণের কথা ছিল।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম