Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুগপৎ ও জোটে নেই, ভোটেও থাকবে না ইসলামী আন্দোলন

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:১৬

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি— উভয়-ই মিত্র হিসেবে পাশে চেয়েছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে। তবে এখন পর্যন্ত কারও ডাকেই সাড়া দেয়নি ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটি। বিএনপির সঙ্গে চলমান ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে নেই তারা। সরকারবিরোধী কোনো জোটেও ভেড়েনি চরমোনাই পীরের দলটি।

তবে সরকারবিরোধী জোটে না ভিড়লেও ‘জাতীয় সরকারে’র অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থেকে এককভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের অধীনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না তারা। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এ দলটি।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ গত পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দাপট দেখিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা এবং প্রতিটি নির্বাচনে দেশের তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গল-নৌকার বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে ইসলামী আন্দোলনের ডাক পেলেই ছুটে গেছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা।

চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই দরবার শরিফে আয়োজিত বার্ষিক মাহফিলে যোগ দেন। সেটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও আলোচনায় রাজনীতি উঠে আসে এবং প্রতিনিধিরা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আগ্রহ না থাকায় ওই আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি। বিএনপির ‘তত্ত্বাবধায়কে’র ধারণার জায়গায় ইসলামী আন্দোলন ‘জাতীয় সরকারে’র ধারণা নিয়ে এগোচ্ছে। কারণ দলটি মনে করে, দলীয় সরকারের অধীনে যেমন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, তেমনি ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের অধীনেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না। অতীতে এ ব্যবস্থার মধ্যেও নানারকম ‘ঘাপলা’ দেখা গেছে। তারা চান সব দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার। এমন সমীকরণ থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে যায়নি চরমোনাই পীরের দল।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যে জোট গঠনের কথা শোনা যাচ্ছিল, সে ব্যাপারেও কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না ইসলামী আন্দোলন। দলটির শীর্ষ নেতাদের পরিষ্কার বক্তব্য— যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে তারা রাজনীতি করেন, তার সঙ্গে শতভাগ তো দূরের কথা, কাছাকাছি মনোভাবের কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় নেই। প্রায় প্রতিটি দলই আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির ভাবাদর্শ মেনে নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে কোনো দলের সঙ্গেই রাজনৈতিক জোট গঠনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ইসলামী আন্দোলন।

অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন ও জোটে না থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত বা সমঝোতার পথে হাঁটবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনে হলে সেই নির্বাচন তারা বয়কট করবে। এরই মধ্যে সভা-সমাবেশে ভাষণ-বক্তৃতায় বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন দলটির নেতারা। খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অবস্থান পরিষ্কার করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

দলীয় সূত্র মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো প্রস্তুতি ও সক্ষমতা রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দলটির। গত জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তারা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। যেখানে আওয়ামী লীগ (২৬২), বিএনপি (২৫৮) এবং জাতীয় পার্টি (৪৫) এককভাবে এতগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো এককভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। সেবার দলটি ১৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাত লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৯টি ভোট পায়, যা মোট ভোটের ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছিল, যা ছিল মোট ভোটের ১ দশমিক ৫২ শতাংশ।

বর্তমানে সারাদেশে ১৩ জন ইউনিউন পরিষদ চেয়ারম্যান, কয়েক ডজন ইউপি সদস্য, দুই জন পৌর মেয়র এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একজন করে কাউন্সিলর রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। আগামীতে যেকোনো নির্বাচনে অংশ নিলে ইতিবাচক ফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী দলটির শীর্ষ নেতারা। যদিও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবার প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। তার ওপর আস্থা রেখে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। সেই নির্বাচনে কী হয়েছে, সেটা সবাই দেখেছেন। আমরা মনে করি, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং, কোনো অবস্থাতেই আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

ইসলামী আন্দোলন জোট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট যুগপৎ আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর