র্যাংকিংয়ে ১২০ নম্বরে রাবিপ্রবি, যুগোপযোগী মানোন্নয়নে জোর
৪ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৫৮
রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) স্থান পেয়েছে ১২০ নম্বরে। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান ১৯ হাজার ১৫২। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষায়িত এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দেশীয় ও বৈশ্বিক র্যাংকিংকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবেই দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদরা।
তারা বলছেন, রাবিপ্রবি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে যে কয়টি বিভাগ রয়েছে সবগুলোতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। এর বাইরে জনবল ছাড়াও অবকাঠামোর সংকট প্রভাব ফেলছে শিক্ষার যুগোপযোগী পরিবেশ তৈরিতে। প্রতিষ্ঠার এক দশকেও নির্মাণ হয়নি স্থায়ী কোনো ভবন। গুণগত মান বাড়ানো ও অবকাঠামোসহ অন্যান্য সংকট নিরসন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং উর্ধ্বমুখী হবে বলে করছেন শিক্ষাবিদরা।
দেশের ১৭০টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ নিয়ে এই র্যাংকিং তৈরি করেছে স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবোমেট্রিক্স। প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক জরিপ কার্যক্রমের চলতি বছরের জুলাই মাসের সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যা তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়েছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশের শুরুতেই রয়েছ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), যার বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ১০৫১। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বক র্যাংকিং ১১৯২), তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট (বৈশ্বিক র্যাংকিং ১৪২১)। পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ১৪৭৬), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ২০১৮), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৩১৮), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৪৫৪), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৫৭৩), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৭৩৫) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৮২৬)।
ওয়েবোমেট্রিক্স জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে তৈরিতে মানদণ্ড হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রভাব, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সাম্প্রদায়িক সন্নিবেশ অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা বিবেচনায় নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, রাবিপ্রবির পাঁচটি বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৮১ জন। শিক্ষক রয়েছেন ২৮ জন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। এ ছাড়া ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসার্চ টেকনোলজি বিভাগ নামে একটি বিভাগ থাকলেও সেখানে কোনো শিক্ষক থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান ১২০ নম্বরকে ‘সন্তোষজনক’ হিসেবেই দেখছেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশীয় অবস্থান ১২০ নম্বরে জানতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পাবলিকের তুলনায় অনেক গতিশীল। সরকারকে আমাদের বেতন দিতে হয়, ভবন অবকাঠামো করে দিতে হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১০ বছর হলেও ভূমি অধিগ্রহণেই লেগেছে সাড়ে চার বছর। এর কারণে আগের ভিসি বেশি কিছু করে যেতে পারেননি।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘রাবিপ্রবি নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখন ফিরলেও পাঁচটি অস্থায়ী স্থাপনা করা হয়েছে। যেখানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ল্যাব নেই, খেলাধুলা-প্রতিযোগিতা করার সুযোগ নেই। সারাদিন ক্লাসই করতে হচ্ছে। আমাদের এখানে সিনিয়র শিক্ষক না থাকলেও যারা আছেন তারা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পড়ান।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং হিসাব করলে নিচের দিকেই থাকবে- এটিই স্বাভাবিক। শিক্ষক সংকট, জনবলের সংকট তো আছেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কোনো অবকাঠামো পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে কোনো সুবিধাই নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে র্যাংকিং নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
এসব সংকট নিরসন করা গেলে এবং অবকাঠামোগত সংকট কাটিয়ে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাবিপ্রবির র্যাংকিং উর্ধ্বমুখী হবে বলে মনে করেন নিরূপা দেওয়ান।
সারাবাংলা/টিআর/আইই
বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রাবিপ্রবি