মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ পৌরসভার একটি বাড়িতে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় এক কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তার মোবাইল ফোনে ভিডিও কল চলতে দেখা যায়। ভিডিও কলে কে যুক্ত ছিলেন সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ওই তরুণী কেন আত্মহত্যা করেছেন, সে বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) সকালে মানিকগঞ্জ পৌরসভার বৈতরা এলাকার সুমন হোসেনের বাড়ি থেকে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত কলেজছাত্রীর বিলকিস আক্তারের (২০) বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সিংজুরী ইউনিয়নের হাটকুড়িয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মো. বাবু মিয়ার মেয়ে। মানিকগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘কলেজছাত্রী বিলকিসের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সকালেই মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়েছে। আত্মহত্যার কোনো প্ররোচনার ছিল কি না, সেটি মোবাইলের ছবি ও ভিডিও কল পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যাবে। তাই মোবাইলে কার সঙ্গে কথা কিংবা ভিডিও কল হয়েছে, সেগুলো আপাতত গোপন রাখা হয়েছে।’
পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিলকিসের জন্মের কয়েক বছর পর তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে বিলকিস তার মায়ের সঙ্গে পৌরসভার বৈতরা এলাকার বাড়িওয়ালা সুমন হোসেনর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এরই মধ্যে বিলকিসের মা মনোয়ারা বেগম সৌদি আরব চলে যান। যাওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে যান।
বাড়ির মালিক মো. সুমন হোসেন জানান, বছর চারেক আগে সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মেঘশিমুল গ্রামের সোহেলের সঙ্গে বিলকিসের বিয়ে হয়। বিয়ের পর বিলকিস শ্বশুর বাড়ি চলে যান, বিলকিসের মা চলে যান সৌদি আরব। তবে ওই ভাড়া বাড়ি ছাড়েননি, প্রতি মাসে ভাড়া পাঠিয়ে দেন। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে বিলকিস দেড় মাস আগে শ্বশুর বাড়ি থেকে ওই ভাড়া বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকেই তিনি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
সুমন হোসেন বলেন, ১০/১৫ দিন আগে বিলকিসের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নিতে এসেছিলেন। কিন্তু বিলকিস তাদের সঙ্গে যায়নি এবং যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। স্বামীকে তালাক দেওয়ার কথাও বলে দেয়। অনেকেরই ধারণা, অন্য এক ছেলের সঙ্গে বিলকিসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছি। নিহতের ফোন আমাদের হেফাজতে। তার আত্মহত্যার কারণ উদঘাটনের স্বার্থে মোবাইলের কার সঙ্গে আলাপ হয়েছে সে তথ্য আপাতত গোপন রাখা হচ্ছে।’
সদর থানার ওসি জানান, বুধবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ কেউ করেননি। তবে এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।