সেপ্টেম্বরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে রূপপুরের বিদ্যুৎ
৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:১৯
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে: আগামী বছর সেপ্টেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। মাসটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। তবে ২০২৫ সালে বাণিজ্যক উৎপাদন শুরু হবে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শৌকত আকবর বলেন, ‘পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণে যে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা হয়েছে তার সব মানা হয়েছে। আমাদের প্রকল্প এলাকায় ইউরেনিয়াম আনতে গিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। তাদের সব শর্ত পূরণ করে রূপপুর পারমাণবিক এলাকা এখন পরমাণবিক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক এলাকা আগামীকাল থেকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পাবে।
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। অনেকেই এর নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু এখানে যেভাবে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে, এর রেডিয়াম কোনোভাবেই ১২ কিলোমিটার বাইরে যাবে না। প্রকল্পটি সেভাবেই নকশা করা হয়েছে।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আসবে। এর প্রায় ১০ মাস পর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সামগ্রিক কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ ৭০ সম্পন্ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নিউক্লিয়ার জ্বালানি প্রকল্প এলাকায় আসার পরই এটি পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হতে যাচ্ছে।’
প্রকল্পের কাজ যেভাবে এগিয়েছে, সঞ্চালন লাইনের কাজ সেভাবে আগায়নি। সঞ্চালন লাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রিড লাইন নির্মাণে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল মন্ত্রণালয় কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি কো-অর্ডিনেট করা হচ্ছে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘সাধারণত নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। সে হিসেবে মাত্র ৭ থেকে ৮ বছরের মধ্যে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করা একটা মাইলফলক। এসবই প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। ইউরেনিয়াম আসার মধ্য দিয়ে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জিডিপিতে দুই শতাংশ অবদান রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন লাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হওয়ার পরই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। সঞ্চালন লাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হওয়ার পরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। ২০২৫ সালের শুরুতে জনগণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাবে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে নিরলসভাবে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত একদিনও এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়নি। বিশ্বের কোথাও এই মানের কোনো প্রকল্পের এতটা অগ্রগতি হয়নি এত কম সময়।’
প্রযুক্তিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এটোমিক এনার্জি কমিশনের (আইএইএ) গর্ভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুতে জনগণ রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাবে। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। এই এলাকার মানুষ মূল স্রোতে চলে আসবে। রাশিয়াকে কিভাবে ঋণ পরিশোধ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রতিটি ধাপেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন মাইলফলক।’
এর মধ্যে দিয়ে আরও একটি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও ইউরেনিয়ান ক্লাবে প্রবেশ করছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম কমিশনিং অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে আসা ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি, রাশিয়া থেকে আসা ইউরেনিয়াম গত ২৯ সেপ্টেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছেছে। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। হস্তান্তর প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আর প্রকল্প এলাকায় এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস