শিশুকে ধর্ষণের পর খুন, ২ আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড
৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে নয় বছর বয়সী শিশুকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর খুনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার দুই আসামিকে আলাদা ধারায় দু’বার আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে উভয় সাজা একসাথে কার্যকর হবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন।
দণ্ডিতরা হলেন, মো. জীবন (২৫) ও ইমন হাসান (২৬)। ঘটনার সময় তারা নগরীর পাঁচলাইশ থানার বহদ্দারহাট এলাকায় লোহা কলোনিতে ভাড়া থাকতেন।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার আরিফুল আলম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আসামিদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৩) ধারায় যাবজ্জীবন অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের আবারও একই সাজা দেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। পরে তাদের সাজামূলে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, খুনের শিকার সালমা আক্তার (৯) নগরীর পাঁচলাইশ থানার বাদুরতলা শাহ আমানত হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা মো. সোলায়মানের মেয়ে। বাসার পাশে আতাতুল ক্যাডেট মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
২০১৭ সালের ১৩ জুন বেলা সোয়া ১২টার দিকে সালমা কেনাকাটার জন্য দোকানের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। দুপুর ২টার পরও বাসায় ফিরে না যাওয়ায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ১০টি রিকশায় করে আশপাশের এলাকায় মাইকিং করা হয় নিখোঁজ সালমার সন্ধানে। কিন্তু খোঁজ না মেলায় ওইদিন সন্ধ্যায় পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সোলায়মান।
পুলিশ তাদের বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে নিখোঁজ সালমার সন্ধানে নামে। ফুটেজে সালমাকে বাসার পাশে নঈমী ভবন নামে একটি মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে তল্লাশি করে পুলিশ কিছুই পায়নি। ১৪ জুন রাত পৌনে ৩টার দিকে সালমার মামা মহিউদ্দিন নঈমী মার্কেটের সামনে গেলে তার নাকে গন্ধ লাগে। বিষয়টি তিনি ভগ্নিপতি সোলায়মানকে জানান।
এরপর পরিবারের সদস্যরা তিনতলা নঈমী ভবনের তৃতীয় তলায় সিঁড়িঘরের পাশে ময়লার স্তূপে কাঠের বাক্সের ভেতর থেকে প্রায় ৩৯ ঘন্টা পর সালমার নিথর দেহ উদ্ধার করেন।
১৩ জুন দুপুর সোয়া ১২টা থেকে ১৪ জুন রাত ৩টার মধ্যে যে কোনোসময় সালমাকে খুন করে লাশ গুম করে রাখার অভিযোগ এনে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন সোলায়মান। পুলিশ ওই বছরের ২২ জুন জীবন এবং পরদিন ইমনকে গ্রেফতার করে। নিহতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
পিপি খন্দকার আরিফুল আলম জানান, পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর এবং পরবর্তীতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ চন্দ্র ঘোষ তদন্ত করে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে শিশুটিকে ফুসলিয়ে মার্কেটের ভেতর নির্জনস্থানে নিয়ে দু’জন মিলে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই বছরের ২৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। আরও তিনজনের সাফাই সাক্ষ্য শেষে আদালত এ রায় দিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ