Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ ‘হাওয়া’ ১৮ লাখ টাকা, ‘কেঁচো খুঁড়তে’ই জুয়াড়িকর্মী

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৩৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান পসিডন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড। একমাস আগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আকস্মিকভাবে ১৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা ‘হাওয়া’ হয়ে যায়। এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে পুলিশ তদন্তে নেমে গ্রেফতার করে প্রতিষ্ঠানটিরই হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তাকে।

শাহনেওয়াজ তিতুমীর সাব্বির (২৬) নামে ওই কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং ও হিসাব কার্যক্রম দেখাশোনা করতেন। পুলিশ জানায়, এ কাজ করতে গিয়ে তিনি ঢুকে পড়েন অনলাইন জুয়ার জগতে। টাকার জোগান দিতে আশ্রয় নেন জালিয়াতির। অফিসের মেইল আইডির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাতিয়ে নেন ১৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

সেই অর্থ তিনটি নিজের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে তা রূপান্তর করেন ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। তবে বিদেশে পাচার হওয়ার আগেই পুলিশ তিতুমীরকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সেটা আটকাতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে।

গ্রেফতার শাহনেওয়াজ তিতুমীর সাব্বিরের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারের পরদিন তিতুমীর জালিয়াতির বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন।

নগরীর আগ্রাবাদে পসিডন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের কার্যালয়। সেখানেই বসতেন তিতুমীর। ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উধাওয়ের ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা দেবব্রত দাশ বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রিমিয়ার ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা টাকা উত্তোলন করতে যান। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় পসিডনের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাই নেই। ১৮ লাখ টাকা ৪২ হাজার টাকা ইতোমধ্যে অনলাইনে স্থানান্তর হয়েছে। আকস্মিকভাবে গচ্ছিত অর্থ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হতবাক হয়ে যান কর্মকর্তারা।

পরদিন মামলা দায়েরের ২৪ দিন পর জড়িত সন্দেহে তাদের প্রতিষ্ঠানেরই হিসাব বিভাগের কর্মরত তিতুমীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে টাকা উধাওয়ের রহস্য ফাঁস হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আড়াই বছর আগে চাকরিতে যোগ দেওয়া তিতুমীরকে গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক লেনদেন অনলাইনভিত্তিক ও প্রি-অ্যাপস চালু করতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে অনলাইনে ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণে ছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহলাদ ইবনে জামিল সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তিতুমীর জানায়, সে বাইন্যান্স পিটুপি নামে একটি অনলাইল অ্যাপসের সঙ্গে যুক্ত। পসিডনের ইয়াহু মেইলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সে ব্যাংক থেকে পাঠানো ওটিপি ব্যবহার করে তিন দফায় ১৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই টাকা অবৈধভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্ম পিটুপি বাইন্যান্সে পাঠিয়ে কিনে নেয় ১৫ হাজার ডলার।’

এদিকে, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিতুমীর বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম সিটি কলেজে মনোবিজ্ঞানে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ি। পাশাপাশি গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে পসিডন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে চাকরি করি। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে অফিস থেকে আমাকে প্রিমিয়ার ব্যাংকে পাঠানো হয় ইন্টারনেন্ট ব্যাংকিং চালু করে আসার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রিমিয়ার ব্যাংকে ফরম জমা দিয়ে আসি। আমাদের অফিসের মেইল আইডি আমিসহ তিনজন ব্যবহার করতাম। প্রিমিয়ার ব্যাংকে ফরম জমা দিয়ে আসার প্রায় এক মাস পর অফিসের মেইলে একটি ইমেইল আসে। সেখানে ব্যাংক থেকে মেইল করে অনলাইন হিসাবে লেনদেনের পাসওয়ার্ড জানিয়ে দিয়েছিল।’

তিতুমীর আরও বলেন, ‘আমি গত একবছর ধরে বাইন্যান্স পিটুপি নামের একটি অ্যাপস চালাই। সেখানে শেয়ার মার্কেটের মতো টোকেনের মাধ্যমে ডলার কেনা যায়। আমি পাসওয়ার্ড পাওয়ার পরদিন ওই অ্যাপসের মাধ্যেমে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করি। এর মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পাঁচ লাখ করে ১০ লাখ ও পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পাঁচ লাখ এবং ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা ট্রান্সফার করাই। এই টাকাগুলো দিয়ে আমি ডলার কিনে বাইন্যান্স পিটুপি অ্যাপসে আমার অ্যাকাউন্টে জমা রাখি। এই ডলারগুলো এখনও আমার অ্যাকাউন্টে জমা আছে।’

ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিতুমীর গত পাঁচ বছর ধরে অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সাইটে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজও করে। অফিসের অজ্ঞাতে অফিসের ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে টাকা সরিয়ে নিয়ে সেটা অবৈধ অনলাইন মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ডলারে রূপান্তর করে রাখেন নিজের কাছে। তবে টাকা পাচার হওয়ার আগেই আমরা তাকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। গ্রেফতার তিতুমীর এখন কারাগারে আছে।’

জানতে চাইলে পসিডন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক শিবু প্রসাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিতুমীর আড়াই বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছিল। সে বিশ্বাসভঙ্গ করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অফিসের টাকা আত্মসাৎ করে। আমরা প্রিমিয়ার ব্যাংকে আমাদের অ্যাকাউন্টটি লক করে রেখেছি।’

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

উধাও জুয়ারিকর্মী টাকা বাইন্যান্স পিটুপি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর