Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশ করছে দেশ

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩০

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লী। ছবি: সারাবাংলা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে: আরও এক ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম কমিশনিং হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর)। এর মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ইউরেনিয়াম ক্লাবে নাম লেখাবে। অর্থাৎ পরমাণু শক্তিধর দেশের তালিকায় যোগ হবে বাংলাদেশের নাম।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায় কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ২০১৩ সালে। এক দশক পরে এসে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম এসেছে রাশিয়া থেকে। বৃহস্পতিবার সেই জ্বালানি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

রাশিয়া থেকে আসা ইউরেনিয়াম গত ২৯ সেপ্টেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় পৌঁছেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ। শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিন ছাড়াও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। হস্তান্তর প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন- সেপ্টেম্বরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে রূপপুরের বিদ্যুৎ

সরেজমিনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান উপলক্ষে গোটা এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ। এলাকাটিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুনে সজ্জিত হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা।

বৃহস্পতিবার ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আগের দিন বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানের জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় এখন সাজ সাজ রব। ছবি: সারাবাংলা

পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইয়াফেস ওসমান বলেন, সাধারণত নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণে ১২ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। সে হিসাবে মাত্র সাত থেকে আট বছরের মধ্যে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ একটি মাইলফলক। এ সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে। ইউরেনিয়াম আসার মধ্য দিয়ে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জিডিপিতে দুই শতাংশ অবদান রাখবে বলেও মন্ত্রী জানান।

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়াম ক্লাবে প্রবেশ করছে উল্লেখ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ করতে গিয়ে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিনিষেধ অনুসরণ করা হয়েছে। ইউরেনিয়াম আনার জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সবার সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে। সব শর্ত পূরণ করেই রূপপুর বিদ্যুৎকন্দ্র এলাকা এখন পরমাণবিক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে এই এলাকাটি বৈশ্বিকভাবে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পাবে।

বুধবার রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ব্রিফ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। ছবি: সারাবাংলা

ড. শৌকত আরও বলেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। পরীক্ষামূলক এই উৎপাদনের প্রায় ১০ মাস পর কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। অনেকেই এর নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এখানে যেভাবে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হচ্ছে, এর তেজস্ক্রিয়তা কোনোভাবেই ১২ কিলোমিটার বাইরে যাবে না। প্রকল্পটি সেভাবেই নকশা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে জয়ের পর সরকার সেটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। দুই যুগের পথ পরিক্রমায় এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

আরও পড়ুন- সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রূপপুরে পৌঁছেছে ইউরেনিয়াম

এখন অবকাঠামো নির্মাণ অনেকটাই শেষ হয়ে আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে হাঁটবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল তথা ইউরেনিয়াম গত বৃহস্পতিবার রাশিয়া থেকে বিমানযোগে এসেছে দেশে। পরদিন শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সড়ক পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় তা নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সেই জ্বালানিই আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।

১২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৪০০ মেগাওয়াট। দেশে আসা জ্বালানি দিয়ে আপাতত প্রথম ইউনিটের উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

ইউরেনিয়াম ইউরেনিয়াম ক্লাব ইউরেনিয়াম হস্তান্তর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরমাণু শক্তিধর দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর