সমন্বিত উদ্যোগই পারে ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে: চিফ হিট অফিসার
৪ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৫১
ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো জটিল প্রাকৃতিক সমস্যাকে মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার বাংলাদেশের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন।
তিনি বলেন, উচ্চ তাপমাত্রা মানুষের শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এল নিনো আসতেই থাকবে এবং এ বছরের চেয়ে আগামী বছরের গ্রীষ্ম আরও বেশি উত্তপ্ত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমরা সিটি নেটওয়ার্ক গড়ার পরিকল্পনা করেছি, আমরা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিয়ে কাজ করছি। আমাদের যতটুকু সম্ভব অভিযোজন করতে হবে এবং সংকট সমাধানের উপায়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগই পারে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজের (বারসিক) যৌথ আয়োজনে ‘শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি: কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন। বারসিক পরিচালক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। বুশরা ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ ও আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। শহরের তাপমাত্রা কমাতে নীতিগতভাবে যেসব উদ্যোগ প্রয়োজন তার জন্য সংসদে কথা বলব।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম বলেন, যে প্রক্রিয়ায় আমরা বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছি, আমাদের আবার সেই প্রক্রিয়ায় আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। গাছ কাটলে তার পরিবর্তে গাছ লাগাতে হবে। জলাধারগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে আশার আলো জাগিয়েছে ছাদ বাগান। সবাইকে ছাদ বাগানের জন্য উৎসাহী করতে হবে।
মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক অনেকগুলো কারণ থাকলেও স্থানীয় কারণগুলো মুখ্য। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে স্থানীয় কারণগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
অধ্যাপক ড. ফিরোজ বলেন, আমাদের জন্য উন্নয়ন জরুরি। কিন্তু আমরা শহরের যে উন্নয়ন করছি সেখানে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখছি না। তাই সেই উন্নয়নও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করেই আমাদের উন্নয়ন করতে হবে।
আবহাওয়াবিদ কামরুল বলেন, পৃথিবী তার নিজস্ব নিয়মে একবার উত্তপ্ত হয়, আবার শীতল হয়। তবে কিছু মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। এখন বাংলাদেশে প্রায়ই এল নিনো দেখা যাচ্ছে এবং এভাবে এল নিনো বাড়তে
থাকলে বাংলাদেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, বর্তমান সময়ে যেসব দালান নির্মাণ করা হচ্ছে, তার অধিকাংশ দেয়ালই কাঁচের তৈরি যা শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষত্রে প্রতিটি উন্নয়ন কার্যক্রমের আগেই আমাদের জনস্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের (কাপ) নির্বাহী পরিচালক রেবাকা সান-ইয়াত, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবি) পরিচালক গাউস পিয়ারী, অ্যাকশন এইডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ, গ্রিন সেভারসের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনিসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর