আত্মপ্রকাশ করেই জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানাল ‘ব্রিগেড ৭১’
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২০
ঢাকা: একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ‘ব্রিগেড ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে তৃতীয় তলায় মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহবায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে ‘ঘাপটি মেরে থাকা’ জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া এবং অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভবনের অঙ্গন থেকে সব বিতর্কিত ব্যক্তিদের কবর অপসারণের দাবি জানান তিনি।
গত ১৫ বছর ধরে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রপরিচালনা করছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেনি; এর পেছনে কোনো কৌশল আছে বলে মনে করেন কিনা?
এমন প্রশ্নের জবাবে রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, এই বেদনা আমাদের মধ্যে আছে বলেই আজ আমরা একত্রিত হয়েছি এবং সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এবার আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের দাবির কথা জানিয়ে দেব। পাশাপাশি সারা দেশে আমারা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সফর করব।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল পার করছে। একাত্তরের পরাজিতরা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনিরা ঘাপটি মেরে বসে আছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। গোপনে সংগঠিত হচ্ছে মানবতা বিরোধীদের বিচারের প্রতিশোধ নিতে। আমরা আশঙ্কা করছি সুযোগ পেলে ২০০১-এর নির্বাচন পরবর্তী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হত্যার মত নৃশংসতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে তারা।এই অপশক্তি এবং তাদের অনুসারীরা সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদের ক, খ, গ এবং ঘ সরাসরি লঙ্ঘন করে সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার বিশেষ ধর্ম পালন কারি কিংবা সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন করছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের সংবিধান, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি যথা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ছুঁড়ে ফেলে দেওয় হয়। সংবিধানকে পাকিস্তানের আদলে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মীয় দলগুলোকে অবাধ রাজনৈতিক করার সুযোগ দেওয়া হয়। সামরিক শাসকদের আমলে এরা মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হয়।
শুনতে এবং দেখতে অবাক লাগে যে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আছে। তাই আগামীতে এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দলে যাতে স্বাধীনতা বিরোধী বা তাদের মদদ দাতা রাজনৈতিক দল ভূমিকা রাখতে না পারে সে জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘ব্রিগেড ৭১’- এর মূল দাবি হচ্ছে বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ও সাম্প্রদায়িক কোন শক্তিকে রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া যাবে না। এছাড়া দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও আইনগতভাবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোন কওমী মাদ্রাসা এগুলো পালন করে না। এটা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান দেখায় না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক মোস্তাক হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিতুল ইসলাম রাজু, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এ এইচ এইচ/এনইউ