Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৯

ঢাকা: ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতার সঙ্গে আর পেরে উঠলেন না খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরী (৮০)। কানাডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩ মিনিট) কানাডার অশোয়া শহরের লেক রিজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আসাদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কবি আসাদ চৌধুরী কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে টরন্টোতে বসবাস করছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন অটোয়ায়। তার পরিবার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কবি আসাদ চৌধুরী ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। গত মাসে এনজিওগ্রাম করে তার হৃদযন্ত্রের দুটি ব্লক সারানো হয়। চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে অশোয়া শহরের লেক রিজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কবি।

আসাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী, মা সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম।

উলানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আসাদ চৌধুরী। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন ১৯৬০ সালে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে নেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে আসাদ চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু। ঢাকায় এসে যুক্ত হন সাংবদিকতায়। ভয়েজ অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন। পরে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। পরে বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেই অবসর নেন।

বিজ্ঞাপন

কবি হিসেবে সমাধিক পরিচিত হলেও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতেই আসাদ চৌধুরীর ছিল স্বচ্ছন্দ্য পদচারণা। শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করেছেন, লিখেছেন ছড়া, জীবনী। বেশকিছু অনুবাদ ও সম্পাদনতেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তার লেখা ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক গ্রন্থ, যা মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থ হিসেবে সব মহলে সমাদর পায়। এ ছাড়া আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও প্রশংসিত ছিলেন। টেলিভিশনে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে একাধিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন সফলভাবে।

আসাদ চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে তবক দেওয়া পান (১৯৭৫), বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬), প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬), জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২), যে পারে পারুক (১৯৮৩), মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪), মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫), দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭), নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২), বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮), বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮), ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)।

আসাদ চৌধুরী ১৯৭৫ সালে পেয়েছিলেন আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে পান বাংলা একাডেমী পুরস্কার। এ ছাড়া শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক, বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক, অশ্বনী কুমার পদক, জীবনানন্দ দাশ পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।

সারাবাংলা/টিআর

আসাদ চৌধুরী কবি আসাদ চৌধুরী