Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘লিঙ্গসমতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রের কাজে ধর্মকে একপাশে রাখতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৫৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো : রাষ্ট্রীয় কাজে ধর্মকে একপাশে রাখার মত দিয়ে চট্টগ্রামে এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, শুধুমাত্র লৈঙ্গিক পরিচয়ে নারী অসমতার শিকার হচ্ছে এমন নয়, ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণেও হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার মিলনায়তনে ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এ বক্তব্য এসেছে। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) সেমিনারের আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

এতে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলা বলেন, ‘সমাজ ব্যবস্থা দুই হাজার বছর আগে কেমন ছিল, আর কিছুদিন পর কেমন থাকবে দুটোই ভিন্ন চিত্র। একসময় সতীদাহ ছিল, নারী শিক্ষা ছিল না। বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়ার অবদান আমরা জানি। ভবিষ্যতের মানুষও আমাদের আজকের অবস্থান বিবেচনা করবে।’

‘আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয় আছে। এটা বাহাত্তরের সংবিধানে এমনিতে আসেনি, ঐতিহাসিকভাবে এসেছে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার হচ্ছিল। তখনই ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি এসেছিল। এখন সমাজের মধ্যে সেই চেতনা জাগ্রত করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা বিশাল।’

চবি’র নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন বলেন, ‘নারীদের নিরাপত্তা না থাকলে তাদের অধিকার প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা যাবে না। নারীর জন্য যেসব গৎবাঁধা নিয়ম চালু আছে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।’

একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোশরেকা অদিতি হক বলেন, ‘জেন্ডার একটি সাংস্কৃতিক নির্মাণ। শুধু লৈঙ্গিক পরিচয়ে কেউ অসমতার শিকার হয়, তেমনটা নয়। ধর্মীয় বিধিনিষেধ, সামাজিক অবস্থান ও প্রান্তিকতা এসব কারণেও নারী বৈষমের শিকার হয়। অধিকার, শিক্ষা, সম্পত্তি ও শ্রমের অধিকার সব মিলিয়েই নারী অধিকার। মুক্তিযুদ্ধের পর সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। গার্হস্থ্য শ্রমে নারীর মূল্য নিশ্চিত করতে পারিনি। রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ রাইট নিশ্চিত হয়নি। সম্পত্তির অধিকারে রাষ্ট্রীয় আইনের সাথে সকল ধর্মীয় আইনের তফাত অনেক।’

বিজ্ঞাপন

চবি’র লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক নওশীন ইসলাম বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংস আচরণ কমছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনলাইন ভায়োলেন্স। ঘরে বাইরে সমাজে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সবাইকে নারীর অধিকার নিশ্চিতে সক্রিয় হতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপিএস’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সমন্বয়কারী মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় ইহজাগতিকতার চর্চার কথা বলছি। এখনকার বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও ধর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। পরজগতে রাষ্ট্রের কোনো কাজ নেই। তাই আমরা বলেছি রাষ্ট্রীয় কাজে ধর্মকে একটু পাশে রাখতে। বাদ দিতে নয়।’

সেমিনারে প্রাসঙ্গিক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমদ। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী পুরুষ সকলের অংশগ্রহণ ছিল। রাষ্ট্রের মূলনীতি ছিল সমতা, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার। কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবে না। তবে এখন সহিংসতায় ধর্মীয় বিষয়কে ইস্যু করা হচ্ছে। এর নির্মম শিকার হচ্ছে নারীরা। নারীরা এখনো সব জায়গায় বৈষম্যের শিকার। ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন নারীকে সমান অধিকার দেয় না। জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’

সেমিনারে অধিকার কর্মী শরীফ চৌহান বলেন, ‘জেন্ডার সমতা একটি বৈশ্বিক ধারণা হলেও বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে এর আছে গভীর যোগ। আমাদের স্বাধীনতার রাজনৈতিক সংগ্রামে এই বিষয় সম্পৃক্ত ছিল। নারী পুরুষের সম ভোটাধিকার আমাদের দেশে আছে। সংবিধান অনুসারে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নানা উদ্যোগ আছে। পার্থিব অধিকার আদায়ে বৈষম্য আইনত দন্ডনীয়। সকল অর্জন পুরোপুরি লাভ করতে হলে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপিএসের রুনা শাকিল আরা, এস এম এরশাদ উল করিম, তপন কান্তি, বিপ্লব দাশ, আবদুল করিম ও তানজিনা নূর।

সারাবাংলা/আরডি/একে

জেন্ডার সমতা রাষ্ট্রধর্ম লিঙ্গ সমতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর