নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার মাতামাতি, সন্দেহ হয় রে…
৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এসে দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? সন্দেহ হয় রে…। এটিই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে…। আসল কথা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি তো খুব স্পষ্ট। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সবসময় সেটিই মেনে চলি। সকলের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। আর নির্বাচনের ব্যাপারে এটি তো আমাদের নিজেদেরও একটা দোষ আছে। আমরা নির্বিাচন নিয়ে খুব একটু বেশি কথা বলি।’
‘যারা নির্বাচন নিয়ে বয়কট করেছে। অথবা নির্বাচনকে সবসময় কলুষিত করেছে অথবা ভোট চুরি করেছে অথবা ভোট ডাকাতি করেছে তাদের কাছ থেকেই শুনতে হয় অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। বাংলাদেশর দুভার্গ্য হলো সেটিই।’
যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে। সেই সময় নির্বাচনের এতো সুষ্ঠতা নিয়ে যাদের উদ্বেগ দেখিনি অথচ সেই ২০০৮ এ যখন একটি অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হলো। যে নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। আর তাদের আবার বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্যজোট। পরে বাই ইলেকশনে একটি বলেও অবহিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা- এমন কোনো অপকর্ম নেই করেনি। এরপর আবার তাদের অবরোধ। মানুষ হত্যা এইগুলো আমরা দেখলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যোগদান করে ৩০০ সিটের বিপরীতে তারা ৭০০ এর ওপরে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। নিজেরা মারামারি করে ইলেকশনে থেকে সরে গেলে। সরে গিয়ে ইলেকশটানে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে আবার আমরা অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি এবং সব জায়গায় এটি প্রচার করে বেড়াচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা হঠাৎ এবং অন্যান্য দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে? যখন মিলিটারি ডিটেকটর ছিল তখন আমরা ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছি। আমরা সংগ্রাম করেছি ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’
নির্বাচনি সংস্কার থেকে শুরু করে জনগণের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটা আওয়ামী লীগ সরকারেই করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম এটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি এবং তারপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সেই নির্বাচন হয়েছে বলেই জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে।’
পঁচাত্তর সাল থেকে ১৯৯৬, ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল দেশকে কী উন্নতি দিয়েছে? মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে? দুর্ভিক্ষ ছিল। উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত, দক্ষিণেও। মানুষ একবেলা খাবার জোটাতে পারত না। ছেঁড়া কাপড় বিদেশ থেকে এনে পরাত। আজকে যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে এটি আওয়ামী লীগ এবং আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তো উন্নতিটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আছে কেন, সেটিই আমার কথা? তাহলে কি একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করে ফেলছে, সেটিই সবার মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না? এটিকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়। এখন সেই প্রচেষ্টা কি না, সেই সন্দেহটি আমারও আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জানে, নির্বাচনে ভোট পাবে না— তারা সব জায়গায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থাকাকালে এত বেশি মানিলন্ডারিং এবং এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তারা বাস্তব অবস্থাটি বোঝে কিনা জানি না। কিন্তু তারা এই একই কথা, ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম। আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আজকে ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না। আমরা তো আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করি, রাস্তায় থাকি। আমি তো এমন নয় যে নতুন আসছি। স্কুলজীবন থেকে রাস্তায় আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আইয়ুব খানের বিরেুদ্ধে করেছি ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে করেছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা সবাই তো ভোট চোর।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তো ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগকে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। আমাদের কাজের মধ্যদিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করি। আর এদেশের মানুষ এখন জানে নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ১৬ দিনের সফর শেষে গত বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীসহ সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি-২০৮)।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছান তিনি। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪২ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের নানাদিক তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এনআর/একে