প্রতিবন্ধী তরুণদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে আলোচনা
৭ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) সেন্ট্রাল টিম লিড নাজমুস সাকিবের আইভিএলপি ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ বিজয়ী প্রকল্প ‘প্রোমোটিং পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন অব ইয়ুথ উইথ ডিজ্যাবিলিটিজ’ এর একটি অংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে শনিবার ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স: অ্যাকসেসিবল পলিটিক্যাল এনগেজমেন্ট ফর ইয়ুথ উইথ ডিজ্যাবিলিটিজ’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, নবগঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব নাহিদ ইসলাম, ডাকসুর সাবেক নির্বাচিত সদস্য যোশিয় সাংমা চিবল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অটিজম বিষয়ক উপ-সম্পাদক আনোয়ারুল কবির দিপু। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন প্রকল্পের পরিচালক নাজমুস সাকিব।
আলোচনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের গুরুত্ব উল্লেখ করে ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন, তবে ভেবে দেখতে হবে কোন ধরনের রাজনীতি দরকার। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি পেশীশক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এই ধরনের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি করতে হবে।’
এ সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বৈষম্য দূর করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব নাহিদ বলেন, ‘সমাজ জীবনে রাজনীতি সবার জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের বাদ দিয়ে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতির মাঠে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা খুব একটা উঠে আসে না। রাজনীতিতে আমরা তাদের বক্তব্যগুলো শুনতে চাই। রাজনীতিতে যেমন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রবেশগম্যতা জরুরি। ঠিক তেমনি সমাজে মানবিক মর্যাদাসহ আনুষঙ্গিক নানা ইস্যুতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাটাও জরুরি।’
ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে নারীরা আরও বেশি উপেক্ষিত অবস্থায় থাকে তাই আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্তির ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সব পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য সংঘাতমূলক রাজনীতি পরিহার করতে হবে।’
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত উল্লেখ করে যোশীয় সাংমা চিবল বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ আছে সাংবিধানিকভাবে। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আসা উচিত। নাহলে তাদের দাবি বা কথাগুলো বলার মতো কেউ থাকবে না। বাইরে থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যাগুলো কেউ উপলব্ধি করতে পারে না।’
ছাত্রলীগের অজিটম বিষয়ক উপ-সম্পাদক আনোয়ারুল কবির দিপু বলেন, ‘রাজনীতি করা মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের প্রতিবন্ধকতা, সমস্যাগুলো সম্পর্কে ভালো জানবেন এবং তারাই এটা থেকে বের হয়ে আসার উপায়গুলো ভালোভাবে বলতে পারবেন। আমাদের মধ্যে বিদ্যমান যে চিন্তাচেতনা রয়েছে তা হলো- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কেন রাজনীতি করবে? তারা অন্যের সাহায্য নিয়ে চলবে। আমাদের এই চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আর ছাত্রলীগ এটি নিয়ে কাজ করছে।’
এই প্রকল্পের পরিচালক নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আমরা ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি প্রাণবন্ত এবং কার্যকর আলোচনা করেছি। আমি খুবই আশাবাদী যে এই আলোচনা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রবেশগম্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে অবদান রাখবে।’
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের সমন্বয়ক যোবায়ের হাসান শুভ্র, পিডিএফের ব্রাঞ্চ ম্যানেজমেন্ট কো-অর্ডিনেটর তানভীর আহমেদ তন্ময়, পিডিএফের ঢাবি ইউনিটের সভাপতি হৃদয় সরকার। এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা।
এর আগে, গত শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ৩৫ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য গণতন্ত্রের ওপর বিভিন্ন সেশন পরিচালিত হয়েছে।
সারাবাংলা/একে