‘ক্ষমতা রক্ষার লড়াই আর ক্ষমতার জন্য রোডমার্চ’
৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের ক্ষমতা রক্ষার লড়াই ও বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার রোডমার্চে জনগণ অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ এসেছে চট্টগ্রামের এক সমাবেশ থেকে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অবস্থান কর্মসূচিতে এই অভিযোগ করা হয়।
শুধু ক্ষমতা নয়, নীতিরও পরিবর্তন করতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আজ দুই দল বা জোটের নামে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য লড়াই চলছে। তারা লুটপাটকারী, তারা গরীব মানুষের রক্তচোষণকারী। এই দুই দলের বাইরে একটি নতুন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের জন্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
‘আজ যারা ক্ষমতায় আছে তারা গদিতে বসে থেকে যাওয়ার জন্য লড়াই করছে, আর যারা রোডমার্চ করছে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। তারা ক্ষমতায় যখন ছিলেন তখন তাদের আজ এই লড়াইয়ের মুভমেন্ট ছিল পুরোই বিপরীত দিকে। সব আমরা জানি। জনগণ এসব দেখে অতিষ্ঠ। তাই আমরা বলতে চাই, এখানে শুধু ক্ষমতার জায়গা পরিবর্তন করলে চলবে না, নীতিরও পরিবর্তন করতে হবে। ১৯৭৩ সাল থেকে আমাদের দেশে যত নির্বাচন হয়েছে, একটি নির্বাচনেও কেউ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচিত হয়েছে বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ প্রত্যেকটি জিনিসের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সামান্য যেকোনো সবজির দামও ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। ব্যবসায়ীদের যার যেরকম খুশি তারা সেভাবে লুটপাট করছে। এই যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি চলছে, সেখানেও এক ধরনের ব্যবসায়ীরা স্যালাইন নিয়ে ব্যবসা করছে। আমরা করোনাকালেও এই সমস্যাটি দেখেছি। সমস্ত জায়গায় আজ লুটেরা ব্যবসায়ীদের কাছে দেশ জিম্মি হয়ে আছে।’
বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রামের সদস্য সচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, ‘রাশিয়া থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। রাশিয়া চুক্তিতে লিখিয়ে নিয়েছে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যদি কোনো বিস্ফোরণ হয় তার দায়ভার সে দেশ নেবে না। কী ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে আমরা দাঁড়িয়ে আছি।’
‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে জনগণের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, পানি-বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে এক কিলোমিটার করতে খরচ হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা যা পুরো বিশ্বে রেকর্ড। জনগণের টাকা এভাবে লুটেপুটে খেতে তাই এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতার গদি ছাড়তে চাচ্ছে না।’
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) চট্টগ্রামের ইনচার্জ আল কাদেরী জয় বলেন, ‘আর মাত্র দুই মাস আছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে সেই আকাঙ্ক্ষা আজ একটি আশঙ্কায় পরিণিত হয়েছে। আসলে কি মানুষ ভোট দিতে পারবে? নাকি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এই নির্বাচন একটি নির্বাসনে পরিণিত হবে। আজ বাংলাদেশের মানুষের সামনে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদের সভাপতিত্বে ও জেলা সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিপিবি দক্ষিণ জেলার সভাপতি কানাইলাল দাশ ও বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা কমিটির সদস্য জাহেদুন্নবী কনক।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন গণমুক্তি ইউনিয়ন জেলা সভাপতি রাজা মিঞা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মো. মছিউদ্দৌলা, শ্রমিক নেতা হেলাল উদ্দিন কবির, ছাত্রনেতা দীপা মজুমদার, মিরাজ উদ্দিন, কৃষক সমিতির নেতা ফরিদুল ইসলাম ও গণতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতির নেতা আকবর মাহমুদ।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম