নওগাঁর রাস্তায় সামসদ্দিনের ‘কাঠের গাড়ি’
৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:২৫
নওগাঁ: মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি সরদার পাড়ার বাসিন্দা সামসদ্দিন মন্ডল। বয়স ৫০ বছর। প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরুতে পারেননি। প্রায় ২৮ বছর ধরে করছেন কাঠমিস্ত্রির কাজ। এই কাজের ফাঁকে ফাঁকে অভিনব ও সৃষ্টিশীল কিছু তৈরিতে তার ঝোঁক রয়েছে। এর আগে, কাঠের মোটরসাইকেল বানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় তার সেই মোটরসাইকেল বেশ সাড়া ফেলেছিল। এবার তিনি কাঠ দিয়ে বানালেন গাড়ি। দীর্ঘ ছয় মাসের প্রচেষ্টায় চার চাকার একটি গাড়িকে কাঠের বডিতে রূপ দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই সামসদ্দিনের তৈরি দৃষ্টিনন্দন এই গাড়িটি রাস্তায় চলাচল করায় এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
সামসদ্দিনের গাড়িটি বলতে গেলে প্রাইভেটকারের আদলে তৈরি। গাড়ির পুরো বডি কাঠ দিয়ে বানানো। এটি চলছে বৈদ্যুতিক চার্জে। চালকসহ পেছনে বসার জন্য দুটি আসন রয়েছে। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এ গাড়িটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। বর্তামানে গাড়িটিতে লাগানো আছে ১২০ এমপিআর’র একটি পুরাতন ব্যাটারি। একবার চার্জ দিলে চলে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। তবে চারটি নতুন ব্যাটারি লাগানো গেলে এক চার্জে সারাদিন চালানো যাবে বলে জানান তিনি।
সামসদ্দিন পরিবেশবান্ধব এই গাড়ির নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কোনো কাজে বের হলেই নজর কাড়ছে পথচারীদের। এক নজর দেখার জন্য গাড়ির চারপাশে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ আবার গাড়িটির সঙ্গে নিজের ছবি তুলে রাখছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ বলেন, ‘কাঠ দিয়ে যে এত সুন্দর গাড়ি বানানো যায় এর আগে কখনোই দেখিনি। দেখে খুব ভালো লাগল। তার মেধার প্রশংসা করতে হয়।’
সুমাইয়া বলেন, ‘গাড়িটি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। দেখার মতো। গাড়ি দেখে উঠতে মন চায়। তবে এখনও ওঠা হয়নি। দুয়েকদিনের মধ্যেই গাড়িতে উঠে ঘুরব।’
সামসদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘রাস্তায় বিভিন্ন যাহবাহন চলাচল করতে দেখে ভাবতাম কীভাবে নিজে গাড়ি তৈরি করব। এর পর একদিন শখের বসে বাজার থেকে কাঠ কিনে আনি। এর পর কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুরু করি গাড়ি বানানোর কাজ। ছয় মাসের মধ্যে গাড়িটি বানানো শেষ করি। এই কাজে কেউ সহযোগিতা করেনি। নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকেই গাড়িটি তৈরি করেছি। গাড়িটির চাকা ও এক্সেল ছাড়া সব জায়গাতে ব্যবহার করেছি কাঠ। গাড়ি বানাতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। তবে এখনও রং-এর কাজ বাকি আছে।’
কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল বলেন, ‘নিজের প্রচেষ্টায় কাঠ দিয়ে পরিবেশবান্ধব এমন গাড়ি তৈরি করায় আসলেই প্রশংসার দাবিদার তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।’
সারাবাংলা/পিটিএম