Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সেপ্টেম্বরে ৩৯৮ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯৪ জন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৪৯

ঢাকা: গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯৮টি। নিহত ৩৯৪ জন এবং আহত ৭৮৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৪৮, শিশু ৫৩। ১৬৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫১ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৭ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

রোববার (৮ অক্টোবর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই সময়ে ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ৬ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫১ জন (৩৮ দশমিক ৩২%), বাস যাত্রী ১৬ জন (৪ দশমিক শূন্য ৬%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-লাশবাহী ফ্রিজিংভ্যান আরোহী ১৫ জন (৩ দশমিক ৮০%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১০ জন (২ দশমিক ৫৩%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু) ৬৮ জন (১৭ দশমিক ২৫%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু) ২৪ জন (৬ দশমিক শূন্য ৯%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ১৩ জন (২ দশমিক ২৯%) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন

বিজ্ঞাপন

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩৯টি (৩৪ দশমিক ৯২%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৮৩টি (৪৫ দশমিক ৯৭%) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৯টি (১২ দশমিক ৩১%) গ্রামীণ সড়কে, ২২টি (৫ দশমিক ৫২%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৫টি (১ দশমিক ২৫%) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন

দুর্ঘটনাসমূহের ৫৮টি (১৪ দশমিক ৫৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯৩টি (৪৮ দশমিক ৪৯%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৫টি (২৩ দশমিক ৮৬%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৩৬টি (৯ দশমিক শূন্য ৪%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি (৪ দশমিক শূন্য ২%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-তেলবাহী ট্যাঙ্কার-পুলিশ পিকআপ ২৫ দশমিক ৮০%, যাত্রীবাহী বাস ১৫.৩৮%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো ৫ দশমিক ১২%, মোটরসাইকেল ২৮ দশমিক ২০%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু) ১৬ দশমিক ৫০%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু) ৩ দশমিক ৬৮%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৩ দশমিক শূন্য ৪% এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২ দশমিক ২৪%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬২৪টি। (বাস ৯৬, ট্রাক ৯২,কাভার্ডভ্যান ১৭, পিকআপ ২৪, ট্রাক্টর ৭, ট্রলি ৮, লরি ৭, ড্রাম ট্রাক ৪, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ১, পুলিশ পিকআপ ১, মাইক্রোবাস ১৭, প্রাইভেটকার ১২, অ্যাম্বুলেন্স ২, পাজেরো ১, মোটরসাইকেল ১৭৬, থ্রি-হুইলার ১০৩ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ২৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১৯ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ১৪টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ২৭%, সকালে ২৩ দশমিক ৮৬%, দুপুরে ১৯ দশমিক শূন্য ৯%, বিকেলে ১৩ দশমিক ৩১%, সন্ধ্যায় ১১ দশমিক ৮০% এবং রাতে ২৭ দশমিক ৬৩%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০ দশমিক ৪০%, প্রাণহানি ২৯ দশমিক ৪৪%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ৫৬%, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৬৭%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮ দশমিক ৩৪%, প্রাণহানি ১৭ দশমিক ৫১%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২ দশমিক ৩১%, প্রাণহানি ১৩ দশমিক ১৯%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৮ দশমিক শূন্য ৪%, প্রাণহানি ৭ দশমিক ৮৬%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক শূন্য ২%, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৮৫%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৭৮%, প্রাণহানি ৭ দশমিক ৬১% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৫২%, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৮৩% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১২১টি দুর্ঘটনায় ১১৬ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২০ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও নড়াইল জেলায়। এই ৫টি জেলায় সামান্য মাত্রার ১১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

রাজধানী ঢাকায় ২৩টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন।

নিহতদের পেশাগত পরিচয়

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ২ জন, বিজিবি সদস্য ১ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৯ জন, চিকিৎসক ২ জন, সাংবাদিক ৩ জন, প্রকৌশলী ১ জন, শিক্ষা কর্মকর্তা ১ জন, কৃষি কর্মকর্তা ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৩ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৬ জন, চীনা নাগরিক ১ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৬ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২১ জন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৩ জন, পোশাক শ্রমিক ৭ জন, বিদ্যুতের ফোরম্যান ১ জন, ওয়ার্কশপ শ্রমিক ১ জন, রাজমিস্ত্রি ২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ২ জন, মানসিক প্রতিবন্ধী ৩ জন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন এবং ডুয়েট এর ১জন ছাত্র-সহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা-কলেজের ৪৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ

১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশসমূহ

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনা ও মন্তব্য

গত আগস্ট মাসে ৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৮ জন নিহত হয়েছিল। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা কিছুটা কম। দেশে ডলার সংকটে পণ্যসামগ্রী আমদানি কমার কারণে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল কমেছে। যেহেতু পণ্যবাহী যানবাহনের চাপা/ধাক্কায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে, সেহেতু দুর্ঘটনা কমার ক্ষেত্রে এটি একটি কারণ। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনারোধে যথেষ্ট তৎপর হয়েছেন, যা দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হচ্ছে।

অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ যেমন দরকার, তেমনি দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন। প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনের গতি নজরদারি করতে হবে। বেপরোয়া যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।

ইদানিং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের পেছনে বেপরোয়া যানবাহনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে এমন ৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়কে যানবাহন দাঁড়ানো নিষিদ্ধ করতে হবে।

ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপসহ পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ দরকার। মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর-যুবক। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে জীবনমুখি প্রচারণা চালাতে হবে। একইসঙ্গে গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করে, যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।

সারাবাংলা/একে

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনা সেপ্টেম্বর

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর