২ কারণে ভোটে যাবে না ইসলামী আন্দোলন
৯ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৩১
ঢাকা: আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার ‘জাতীয় সরকার’ ছাড়া নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অথচ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছর সবধরনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি।
নির্বাচন ইস্যুতে হঠাৎ তাদের এই ইউটার্নের পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সৈয়দ মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ‘লাঞ্ছিত’ করার ঘটনা অন্যতম। পর্দার আড়ালে রয়েছে আরও একটি ‘যৌক্তিক’ কারণ।
দলীয় সূত্র মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা ও প্রস্তুতি— সবই রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। যেখানে আওয়ামী লীগ ২৬২, বিএনপি ২৫৮ এবং জাতীয় পার্টি মাত্র ৪৫ আসনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
ইসলামী আন্দোলনের এই সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং দেশব্যাপী মজবুত ‘দলীয় ঐক্য’ থাকলেও সারাদেশে তাদের ভোট খুব বেশি নয়। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো এককভাবে ১৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৯ ভোট পায় ইসলামী আন্দোলন, যা মোট ভোটের ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মাত্র। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছিল, যা মোট ভোটের ১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: যুগপৎ ও জোটে নেই, ভোটেও থাকবে না ইসলামী আন্দোলন
এই দেড় শতাংশ ভোট পুঁজি করে সরকার গঠন বা প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ‘অবাস্তব চিন্তা’ ইসলামী আন্দোলনের নেই। তবে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে সারাদেশে ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান, কয়েক ডজন সদস্য, দুই জন পৌর মেয়র এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একজন করে কাউন্সিলর থাকা দলটির প্রত্যাশা ছিল একাদশ জাতীয় সংসদে তাদের একজন প্রতিনিধি থাকবে। ক্ষমতাসীন দল চাইলে বরিশাল-৫ আসন ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে ছেড়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে পারত। কিন্তু সেদিকে হাঁটেনি আওয়ামী লীগ।
ইসলামী আন্দোলনের মাঠ পর্যায়ের সক্রিয় কর্মীরা মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনফ) এস এম আবুল কালাম আজাদ, ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে বরিশাল-৫ আসন থেকে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম কেন নির্বাচিত হতে পারবেন না?
তারা বলছে, গত দুইটি নির্বাচনে সাইনবোর্ড সর্বস্ব তিন/চারটি দলের প্রায় ডজন খানেক নেতা সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। অথচ ইসিতে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জনভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার ইচ্ছা থাকলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অন্তত বরিশাল-৫ আসন হাত পাখার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমকে ছেড়ে দিতে পারত।
দলীয় সূত্র মতে, মুখে না বললেও ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের প্রত্যাশা ছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনে অন্তত বরিশাল-৫ আসনটা তাদের জন্য ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। গতবার এ আসনটা ছেড়ে দিলে রাজনীতির মাঠে পরস্পর পরস্পরের বিরোধিতা সত্ত্বেও দুই দলের মধ্যে সবসময় যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজয় ছিল, তা ভবিষ্যতেও বজায় থাকত। কিছু বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও গতবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যেত ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ চলতি বছর ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের গায়ে হাত তুলে দুই দলের ‘চমৎকার সম্পর্ক’র কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন,‘গতবার মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের আসনটা ছেড়ে দিলে এবার হয়তো আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচনে যেত ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু উনারা (আওয়ামী লীগ) সব একা খাইতে চেয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় গেছে পাঁচটি আসন ছাড়লেও তাদের অধীনে আর নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, নির্বাচনে গেলেই ‘জাতীয় গাদ্দার’ হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।’
ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আসন ভাগাভাগির নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই জাতীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কাকে আসন দেবে, কাকে দেবে না।’
সমঝোতা বা আসন ভাগভাগির প্রস্তাব পেলে কী করবেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ জিনিসটাই তো খারাপ। তারা (আওয়ামী লীগ) কি আসনের মালিক নাকি? আসনের মালিক তো জনগণ। ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিক। আসন যার যা পাওয়ার, সে তা পেয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম