Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতি আসনের শর্টলিস্টে ২ জন, মনোনয়ন ঝুঁকিতে শতাধিক এমপি

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ অক্টোবর ২০২৩ ২১:১৯

ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতির কাজও এগিয়ে নিচ্ছে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নভেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এর পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন। এই সরকার গঠনের পর পরই মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে ধরেই গ্রহণযোগ্য ও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা চিন্তা করে ভোট প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সে লক্ষ্যে প্রতি আসনের জন্য দুই জন করে প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বর্তমান সংসদের শতাধিক সংসদ সদস্য দ্বাদশের ভোটযুদ্ধে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। এই সংখ্যা ১২০ অতিক্রম করবে। সেই হিসাব ধরেই ওইসব আসনের জন্য বিকল্প প্রার্থী চূড়ান্ত করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে দলীয় হাই কমান্ডের হাতে পৌঁছে গেছে। সারাবাংলাকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন হারান আওয়ামী লীগের ৫৬ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী। তার আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনেও বাদ পড়েন ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জন।

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত তালিকায় নামিয়ে এনেছেন। এখন মাত্র ৪৫টি আসনে চূড়ান্ত জরিপের কাজ চলছে। এসব আসনে জরিপ প্রতিবেদন আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলীয় প্রধানের হাতে পৌঁছবে। তবে মনোনয়ন নিশ্চিত এমন কিছু সংসদ সদস্যকে ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে সংকেত দিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা গ্রুপিং এড়িয়ে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বিএনপি নির্বাচনে আসবে– এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখেই দলের মনোনয়ন কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছেন দলীয় সভাপতি। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি আসনে শুধু দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলেও দলীয় মনোনয়নের বাইরে বিকল্প প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে শামিল করে নির্বাচনি বৈতরণী পার করারও কৌশল রয়েছে দলটির।

নির্বাচন ও মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আগামী জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে- সেটা নির্বাচন কমিশনই বলে দিয়েছে। তার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে। সম্ভবত অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথমদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে এবং তারপর নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হবে। যতদূর আমি জানি, বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিএনপি বাইরে বাইরে যত যাই বলুক না কেন ভেতরে ভেতরে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

নেতারা জানান, দ্বাদশের ভোটেযুদ্ধের লড়াইয়ে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের অবস্থান খুবই নাজুক। এরকম অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের সন্তানদের দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে শামিল করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদের উপ-নির্বাচনগুলোতে যত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে সেখানে কেবলমাত্র সিরাজগঞ্জ-১ আসন বাদে সব বাকি সব জায়গায় তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা দ্বাদশের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায়ও অব্যাহত থাকবে।

মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়নের কাজ গত এক বছর থেকে চলছে। কারণ, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। জরিপ চলছে। আমরা তৃণমূল নেতাদেরও মতামত নেব। তৃণমূলের মতামত সম্ভবত শিডিউল ঘোষণার পর নেওয়া হবে। তবে ফাইনালি আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড নির্ধারণ করবে কাকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমি আশা করি, যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করবে।’

ফারুক খান বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় আট থেকে দশ জন যোগ্য প্রার্থী আছে। কিন্তু সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। সেজন্য আমরা প্রধানত চারটি ক্রাইটেরিয়া ঠিক করেছি। এক. এলাকায় জনপ্রিয়তা, দুই. দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক, ৩. কোভিড-১৯ পিরিয়ডে তার কর্মকাণ্ড, ৪. তার নামে কোনো বদনাম আছে কি না। এসবের উপর ভিত্তি করে জরিপ হয়েছে। তৃণমূল থেকে মতামত আসবে এবং তার উপর ভিত্তি করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যদি কেউ চারটি ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে না পারেন, তাহলে মনোনয়ন পাবেন না।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যতদূর জানি, মনোনয়নের বিষয়গুলো প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন মাননীয় নেত্রী পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি সবকিছু যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে মাঠ জরিপ করে একটি চূড়ান্ত জায়গায় রয়েছেন বলে মনে করি। যারা যোগ্যপ্রার্থী, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে- তাদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন চূড়ান্ত সঠিক ও সুন্দরভাবে হবে; নেত্রী সেভাবেই যাচাই-বাছাই করছেন।’

এদিকে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য এবং দলের নীতিনির্ধারক নেতা হওয়ার পরও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি বেশ কয়েকজন। তারা হলেন- দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। এদের মধ্যে তিন জন দ্বাদশের ভোটযুদ্ধে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেজন্য ওই নেতারা ইতোমধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীসহ জনগণের কাছাকাছি যাচ্ছেন।

এর আগে, শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নের যোগ্যতার বিষয় স্পষ্ট করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন? যোগ্যতা খুব স্বাভাবিক। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, বা এত বছর যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা জনগণের জন্য কতটুকু কাজ করছেন এবং তাদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন কিনা- সেটাই আমরা বিবেচনায় নিই। আর নিই বলেই আমরা নির্বাচনে জয়ী হই এবং মানুষের জন্য কাজও করতে পারি।’

দলীয়প্রধান সংসদীয় বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘করোনার সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমাদের অনেক সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। কাজেই মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে সেটা আমরা বিবেচনা করব। আমি প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর সার্ভে করি। কারও পরিস্থিতি একটু খারাপ হলে মুখের উপর বলে দিই, আপনার অবস্থা কিন্তু খারাপ। এখানে এই জায়গায় এই কাজ করতে হবে। আমরা সচেতন বলেই কিন্তু ইলেকশনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই, জয়ী হই। এবং পর পর তিন বার সরকার গঠন দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি।’

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ ঝুঁকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মনোনয়ন শতাধিক এমপি শর্টলিস্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর