তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের দাবি
৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০৭
ঢাকা: জীবন ও পরিবারের জন্য অতি দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট। সোমবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উদ্যোগে এক অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।
৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস। ২০১১ সাল থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বেসরকারি সংগঠনগুলো এই দিনটিকে পালন করে আসছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জীবনের জন্য, পরিবারের জন্য তামাক কোম্পানির আগ্রাসন প্রতিহত করুন’ স্লোগানকে সামনে রেখে ওই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর পক্ষ থেকে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটভুক্ত ও সমমনা বেশ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে ৯ অক্টোবরকে সরকারীভাবে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি রেলপথ, শিল্প, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তামাক নিয়ন্ত্রণে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরইমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ অনুসারে সারাদেশে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার মেয়রগণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার, কোম্পানির হস্তক্ষেপ, বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফলতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো যতবারই সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই কোম্পানিগুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
বক্তারা আরও বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের প্রচারণা এবং নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমে অর্থ লগ্নি করে। কিন্তু তামাক কোম্পানির তুলনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এই খাতে বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বেশি। দেশের শহরকেন্দ্রিক রেস্তোরাগুলোতে তরুণদেরকে আকৃষ্ট করতে সিগারেট কোম্পানিগুলো নিজস্ব অর্থায়নে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্মাণ করে দিচ্ছে। এছা্ড়া, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে উল্লেখিত মূল্যের থেকে অধিক মূল্যে সিগারেট বিক্রি করায় সরকার প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। এ ছাড়া সভায় বক্তারা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী যুক্ত করার পাশাপাশি প্যাকেজিং ব্যবস্থা আধুনিক করার দাবি জানান।
সভা শেষে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ত্রুটিগুলো সংশোধনের পাশাপাশি বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিকা অনুসারে বিক্রেতাদের জন্য লাইসেন্সিং ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সার্বিক মনিটরিং ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ। ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্মাণ সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধকরণ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা। সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমে তামাক কোম্পানির অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা। কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করা এবং শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন করা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে