রিজার্ভ যা আছে, কমে গেলে বিপদ হতে পারে: রেহমান সোবহান
৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশে রিজার্ভ এখন যা আছে, তার চেয়ে কমে গেলে বিপদ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে কমে দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সেটি আছে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ যদি ১০ বিলিয়ন ডলারও হয়, তখন আইএমএফের সহায়তা পাওয়া যাবে না। তবে নীতি-নির্ধারকদের রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
সোমবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা।
বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় একটি রফতানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি।’ সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে; আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটি করার জন্য বড় ব্যবসায়ী নয়; বরং যারা এসব করছেন, তারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।’
চলমান ডলার সংকট নিরসনে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নীতি-নির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করবেন না কি ডিম কিংবা সার আমদানি করবেন।’
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় ভালো করেছে মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। কিন্তু বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমরা ভালো করছি। এর কারণ বাংলাদেশ সবসময় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে তৎপর ছিল।’
দেশে আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে আমি লিখেছিলাম এক দেশ দুই অর্থনীতি। এখন দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও এর সুফল সবাই সমহারে পাচ্ছে না।’ এ ধরনের আয় বৈষম্য বজায় রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে ভালো কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু সরকার ১৫ বছর পরে এসেও কেন ভাড়ায়চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করছে, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘সরকারকে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে