Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে প্রতি ৮ জনে ১ জন মানসিক রোগী, চিকিৎসা পায় না ৯১%

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪৫

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতি আটজনে একজন মানসিক রোগী। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শিশুদের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তবে চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মানসিক সমস্যায় ভোগা ৯১ শতাংশই চিকিৎসা পায় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবাসমূলক বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউজ।

সোমবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ইউএসএআইডি সুখি জীবন প্রকল্প ও পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন আর রশিদ। তিনি জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি জরিপ করে। ওই জরিপ অনুযায়ী ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছরে বয়সীদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশ।

তিনি আরও জানান, সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

মো. হারুন আর রশিদ জানান, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশে ২০১৯ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ব্যবস্থা চালু করে। যার লক্ষ্য হচ্ছে স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগে আক্রান্তদের জন্য মানসম্মত পরিষেবা চালু করা। কর্মসূচির লক্ষ্য হলো ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ কোটি মানুষের জন্য সেবার পরিধি বাড়ানো। এ কর্মসূচি গ্রহণকারী ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে করা প্রাক-মূল্যায়ন তথ্যানুসারে বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭০ শতংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ মহামারির পর এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিষেবাগুলোতে বরাদ্দ রয়েছে।

মো. হারুন আর রশিদ জানান, দেশের ৯১ শতাংশ মানসিক রোগী চিকিৎসা পায় না। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো— উদ্বেগ, আতঙ্ক, সামাজিক ভয়, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, শুচিবায়ু, নির্দিষ্ট জিনিসে ভয় বা ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া এবং ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।

তিনি বলেন, ‘সমস্যা থাকলেও আশার কথা হলো, সরকার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০৩০। ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাডলেসেন্ট হেলথ ২০১৭-২০৩০ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের জন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তকরণ।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. মো. মনজুর হোসাইন বলেন, ‘আগে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন এর গুরুত্ব বাড়ছে। দিন দিন মানসিক সমস্যার সংখ্যক বাড়ছে। তবে, আমাদের দেশে মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশ কম। মাত্র ২৭০ জন মনোবিজ্ঞানী আছেন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন মানসিক রোগী আছেন, তার সঠিক তথ্য নেই। ২০১৯ সালের পর দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও, তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের আটজনের একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশেও হারটি এমনই হবে। খুব বেশি হেরফের হবে না।’

বিজ্ঞাপন

১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মনজুর হোসাইন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্রথম বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। সে সময় দিবসটির যে থিম ছিল তার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘সারা বিশ্বের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত করা’।

এবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’।

সারাবাংলা/এসবি/একে

মানসিক স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যসেবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর