Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এস এম সুলতানের প্রয়াণ দিবস আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৬

নড়াইল: বাংলার মাটি ও মানুষের শিল্পী এস এম সুলতান। চিত্রা নদীর তীরঘেঁষে বেড়ে ওঠা তার। নাগরিক কোলাহলের মানিয়ে নিতে না পেরে ফিরে গেছেন সেখানেই। থেকেছেন আমৃত্যু— নদীর কাছে, মানুষের কাছে, মাটির কাছে। মনপ্রাণ উজাড় করে এঁকেছেন এই মাটি-জলের ছবি, কৃষকের ছবি, কিষাণীর ছবি। শৈশবের লাল মিয়া থেকে এস এম সুলতান হয়ে বিশ্বখ্যাতি পেলেও নিভৃতেই কাটিয়েছেন জীবন।

বাংলাদেশি চিত্রকলার সেই ‘সুলতান’ এস এম সুলতানের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর)। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা নিয়ে ১৯৯৪ সালের এই দিনে ৭০ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নড়াইলের নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় তাকে সমাহিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী জেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমী ও সুলতান কমপ্লেক্সের আয়োজনে রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। শিল্পীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, শিল্পীর উদ্দেশে শিশুস্বর্গের শিশুদের লেখা চিঠি ও কবিতা পাঠ, সুলতানের সাবেক ছাত্র ও ভক্ত ২৫ চিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ও তাদের অংশগ্রহণে আর্ট ক্যাম্প, শিল্পীর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা, শিশুদের আনন্দ দিতে পাপেট শো, পালাগান এবং সুলতানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শনীর মতো আয়োজগুলো হবে সুলতান কমপ্লেক্স ও জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে।

শিল্পী সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে নড়াইলের সাংস্কৃতিক সংগঠন এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন পৃথকভাবে ১১ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ ও ভারতের চিত্রশিল্পীদের নিয়ে আর্টক্যাম্প, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছাড়াও আলোচনা সভা রয়েছে এসব আয়োজনের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও প্রসারে প্রতি বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নড়াইলের চিত্রা নদীতে আগামী শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নারী ও পুরুষের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হবে। নড়াইল শহরের শেখ রাসেল সেতু থেকে মাছিমদিয়া এলাকায় অবস্থিত এস এম সুলতান সেতু পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশজুড়ে এ নৌকাবাইচের আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।

প্রয়াত এই শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে শতাধিক স্টল বিভিন্ন বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা ট্রেন ও নাগোরদোলাও রয়েছে।

এস এম সুলতানের জন্ম ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায়। ছবি আঁকার ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ছবি আঁকা শিখতে আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য চলে যান কলকাতায়। বয়স কম হওয়ায় সেখানেও ভর্তি হতে পারেননি। পরে ৪০০ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও সেখানকার গঁৎবাঁধা নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারেননি। পড়ালেখা শেষ না করেই ছেড়ে দেন আর্ট স্কুলও।

সুলতান বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছবি আঁকতেন। বেশ কয়েকটি শহরে প্রদর্শনী হয়েছিল তার আঁকা ছবির। প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, শিমলায়। ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রদর্শনী হয় যথাক্রমে লাহোর ও করাচিতে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। ইংল্যান্ডের লেইস্টার গ্যালারিতেও পিকাসো, সালভাদর দালির মতো খ্যাতিমানদের চিত্রকর্মের সঙ্গে তার ছবি প্রদর্শিত হয়। বাংলার রূপ তুলে ধরা সুলতানের সেসব ছবি প্রশংসাও পায়।

পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সুলতান ঢাকায় ফিরলেও পরে চলে যান নিজ জেলা নড়াইলের পুরুলিয়ায় গ্রামে। তখন তিনি যত না ছবি আঁকতেন, তার চেয়ে বেশি সময় কাটাতেন কেবলই প্রকৃতির সান্নিধ্যে। শিশুদের আঁকা শেখাতে পছন্দ করতেন, শিশুদের নিয়ে প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে চাইতেন। থাকতে চাইতেন একেবারে নিভৃতে।

পরে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকা নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে তৈলচিত্র, জলরঙ, কালি-কলমের স্কেচ ও চারকোল মিলিয়ে সুলতানের ১৭টি চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয় শিল্পকলা একাডেমীতে। ওই সময়ই মূলত সুলতার ফের সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সাধারণ মানুষও তখন জানতে পারে তার শিল্পসত্তার কথা।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’, এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’— এরকম বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন এস এম সুলতান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা পান। শিল্পে অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে একুশে পদক ছাড়াও ১৯৯৩ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয় তাকে।

এস এম সুলতান প্রসঙ্গে আহমদ ছফা লিখেছিলেন, ‘কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বভাবিক আকুতি। শেখ মুহাম্মদ সুলতান (এস এম সুলতান) সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত।’

সারাবাংলা/টিআর

এস এম সুলতান শিল্পী এস এম সুলতান সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর