‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই দেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়’
১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৮
ঢাকা: বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আছে বলেই এদেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোঁয়া তোলে আর প্রতিদিন আমাদের ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়, তারা কখনও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে একটা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে।’
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে মুন্সিগঞ্জ-লৌহজং-মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন প্রান্তে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন পদ্মার ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ চালুর পর এবার ট্রেন যোগাযোগের উদ্বোধন করলেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের রেল যাতাযাতের স্বপ্নপূরণ হলো।
মাওয়া প্রান্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুইচ চেপে রেলসংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দেশের মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর প্রথমবারের মতো রেল যোগাযোগের আওতায় এলো।
সরকার ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। রেলস্টেশনগুলো আধুনিকায়ন করাসহ যাত্রীসেবার মান উন্নত করা হয়েছে। কারণ স্মার্ট বাংলাদেশে সবকিছুই স্মার্ট করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমি জানি কোভিড-১৯ মহামারি, সেই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন কাউন্টার স্যাংশন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। তার ধাক্কা আমার দেশেও লেগেছে। সে জন্য আমার আবেদন থাকবে এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জমি আছে আপনারা আবাদ করেন। বিশ্বে যে খাদ্য মন্দা সেটা যেন আমাদের দেশে না আসে।’
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। আমি জানি মাঝে মাঝে একটা দুঃসময় আসে। বিশ্বব্যাপী এই দুঃসময় আমাদের উপরও আছে।’
দেশবাসীকে নিজেদের জমিতে চাষবাদ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষি বিজ্ঞানিরা অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছে। অধিক ফলনশীল ফসল তারা তৈরি করছে। আজ মাছ-মাংস তৈরি তরকারি সবজি সব কিছু উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এই উৎপাদনে আমাদের সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষ বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। এক ভদ্রলোক, হ্যাঁ বিশ্বজুড়ে নাম জুড়েছে তার কিন্তু সামান্য একটা ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে সেটা বলার কারণে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। সেইদিন বলেছিলাম নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করবো। ইনশাআল্লাহ আমরা তা করে দেখিয়েছি।‘
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। যে কারণে ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ৩০০ সিটে পেয়েছিল মাত্র ২৯টা সিট। তারপর থেকে তারা নির্বাাচন বয়কট আর নির্বাচন নিয়ে খেলা অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করা, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা এই ধ্বংসযজ্ঞে মেতে আছে। ২০৪১ এর মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ; স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এসময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুইচ অন করে বহুল কাঙ্ক্ষিত রেল সংযোগ প্রকল্প ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচল উদ্বোধন করেন ঘোষণা করেন।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে সড়কপথে মাওয়ায় সুধী সমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সুধী সমাবেশে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ অনেকে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ভাঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা করেন। রেলপথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ভাঙ্গা রেল স্টেশনে পৌঁছান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী পিতৃভূমি গোপালগঞ্জে যাবেন এবং সেখানে একদিন অবস্থান শেষে আগামীকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) সড়ক পথে ঢাকায় ফিরবেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও