জাহাজে চিনি চুরি: আটকের সময় ‘লাফিয়ে’ নদীতে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের ভাড়া করা জাহাজ থেকে কর্ণফুলী নদীতে লাফিয়ে পড়া এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নৌ পুলিশ জানিয়েছে, জাহাজ থেকে চিনি চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে আটকের সময় ওই শ্রমিক লাফিয়ে নদীতে পড়ে যান। তার পরিবার অভিযোগ করেছেন, চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করে তাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।
নিখোঁজের দুইদিন পর মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন শিকলবাহা খালে কালারপোল সেতুর নিচে এস আলম জেটির পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
মৃত ফজলুল করিম শাকিলের (২৩) বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায়। তিনি এমভি তরিবুল নাজাত-৩ নামে একটি লাইটার জাহাজে খালাসি শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমভি তরিবুল নাজাত-৩ নামে লাইটার জাহাজটি ভাড়ায় এস আলম সুগার রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিনি পরিবহন করে। গত রোববার গভীর রাতে ওই জাহাজ থেকে ৩৫ বস্তা চিনি চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজন খালাসি শ্রমিককে আটক করেন জাহাজের নিরাপত্তা কর্মীরা। এসময় ১০-১২ জন শ্রমিক লাফিয়ে নদীতে পড়ে যান। শাকিল ছাড়া বাকি সবাই অবশ্য নিরাপদে তীরে ফিরে আসেন। শাকিলের লাশ আজ (মঙ্গলবার) উদ্ধার করা হয়েছে।’
জানা গেছে, সোমবার (৯ অক্টোবর) এস আলম সুগার রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছাফা বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় ৩৫ বস্তা চিনি চুরির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে শাকিলসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা তদন্ত করছে নৌ পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিত কুমার নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাহাজটিতে এস আলম গ্রুপের আমদানি করা চিনি ছিল। চুরির অভিযোগ পেয়ে কারখানার নিরাপত্তা কর্মীরা সেখানে গেলে কয়েকজন শ্রমিক লাফিয়ে নদীতে পড়ে যান। সাঁতার কেটে তীরে উঠার পর পাঁচজনকে আটক করে বাকলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এজাহারে সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়, যার মধ্যে এই পাঁচজন এবং নিখোঁজ শাকিলের নামও আছে। পরে শাকিলের লাশ উদ্ধার হয়েছে।’
মঙ্গলবার পাঁচ শ্রমিককে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এসআই সঞ্জিত কুমার নাথ।
এদিকে মৃত শাকিলের ভগ্নিপতি মো. বেলায়েত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাকিলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে চুরির মিথ্যা অভিযোগ করে মারধরের পর নদীতে ফেলে দেয়। আমরা সঠিক তদন্ত চাই। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে বিচার হোক।’
লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শাকিলের পরিবারকে মামলা করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর মামলা করবে। আমরা পুলিশের কাছে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেছি।’
নৌ পুলিশের ওসি একরাম উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে এটি হত্যা নাকি অন্যকিছু সেটা বোঝা যাবে। তবে পরিবার যদি লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ করে, আমরা সেটা খতিয়ে দেখব।’
নৌ পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ ফ ম নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ড কি না আমরা নিশ্চিত নয়। এটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং তদন্তে পরিস্কার হবে।’
এ বিষয়ে এস আলম সুগার রিফাইন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কারও বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস