দেশটাকে জাহান্নাম বলায় বিচারপতি শপথ ভেঙেছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
১০ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:২৮
ঢাকা: ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’— হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের এমন মন্তব্য সংবলিত খবর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নজরে এনেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে আজ (১০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
পরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (বিচারপতি) যেটি বলেছেন সেটা তার শপথের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থাৎ তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে আমি মনে করি। তাই তার ওই বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলো আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির নজরে এনেছি।’
এর আগে, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের করা আপিল ও জামিন শুনানিতে আজ (১০ অক্টোবর) রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’— এমন মন্তব্য করেন।
এদিন আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ তাদের জামিন দেন। এ ছাড়া দুজনের নিম্ন আদালতের ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও স্থগিত করেন আদালত।
আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তাদের কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এদিন আইসিটি আইনে করা মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আদিলুর ও নাসিরের আপিল ও জামিন আবেদন উপস্থাপন শুরু করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, জামিন আবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি আছে।
তখন আদালত বলেন, আবেদনকারীর আইনজীবীদের আগে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে দিন। তারপর আপনি আপনার যুক্তি দেবেন। পিটিশনারদের আইনজীবীরা যুক্তি দেওয়ার আগেই আপনি কেন লাফিয়ে উঠলেন? (আপনারা) দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
এদিন আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. রুহুল আমিন ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর অধঃস্তন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আপিল এবং জামিন আবেদন করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত। সেই সঙ্গে আসামিদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাতযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই অভিযানে ‘বহু মাদ্রাসার ছাত্র নিহত’ হয়েছে বলে ওই সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ তুলেছিল।
পরে এ নিয়ে ২০১৩ সালে ১০ জুন মানবিধকার সংস্থা অধিকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১জন নিহত হয়েছে।
ওই অভিযানের পর একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তৎকালীন ডিবি পুলিশ। পরে সেটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
অধিকারের আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আইসিটি আইনে এই মামলা দায়ের করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে