Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইলিশে নিষেধাজ্ঞা শুরু মধ্যরাতে, অনিশ্চয়তায় জেলে পরিবার

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৭

সামনে নিষেধাজ্ঞা, সাগর থেকে ফিরে এসেছে বোট। তাই অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। ছবি: সারাবাংলা

কক্সবাজার: ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এই মৌসুমে যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো যাবে ব্যাপক হারে। সেই লক্ষ্য নিয়েই ইলিশের সুরক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময় সাগরে কোনো মাছ ধরা যাবে না। একই সময়ে ইলিশ পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ ও বেচাকেনাও সম্পূর্ণ নিষেধ।

২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞায় কার্যকর হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) প্রথম প্রহর, তথা বুধবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে। নিষেধাজ্ঞা চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নিষেধাজ্ঞা মানবেন জানালেও ইলিশ শিকারের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানাচ্ছেন হতাশার কথা। জেলে, বোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, কদিন আগেই ইলিশের ভরা মৌসুম গেছে। কিন্তু কিন্তু আবহাওয়া ছিল বৈরী। আরও প্রতিকূলতা ছিল। তাতে তারা আশানুরূপ ইলিশ পাননি। এখন ২২ দিনের নিষেজ্ঞায় কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়েই দুশ্চিতায় জেলারা।

প্রশাসন অবশ্য নিষেধাজ্ঞা প্রতিপালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কর্মকর্তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তাবায়নে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে। আর নিষেধাজ্ঞার সময়ে যেন চলতে পারে, সে জন্য ২৪ হাজার ৪০ জেলে পরিবারকে দেওয়া হবে ৬০২ মেট্রিক টন চাল। তবে জেলে পরিবারগুলো বলছে, নিষেধাজ্ঞার সময় পুরোটাই বসে কাটাতে হয় তাদের। এ অবস্থায় শুধু চাল সহায়তায় তাদের অভাব কাটে না।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারি ঘাটে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে প্রায় শতাংশ মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। জেলেরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ায় এ মৌসুমে তারা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ পাননি।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে লিয়াকত মিয়া বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুয়েকদিন পর পর সাগরে সতর্ক সংকেত পড়েছে। ঠিকমতো মাছ ধরা হয়নি। বেশির ভাগই ক্ষতির মধ্যে ছিল। তার মধ্যে আবার আসছে ২২ দিনের বন্ধ। জানি না সামনের দিনগুলোতে কী হয়?’

বিজ্ঞাপন

বন্ধের সময়ে সহায়তার জন্য সরকার চাল দেবে— এমন কথা বলতেই আরেক জেলে বেলায়ত হোসেন বলেন, চাল যা দেওয়া হয়, পর্যাপ্ত নয়। তার মধ্যে এই চাল বিতরণ নিয়ে চলে দুর্নীতি। প্রকৃত জেলেরা চাল পায় না, কিন্তু যাদের চাল পাওয়ার কথা না তারা পায়। আমাদের তাই এই সময়ে খুবই কষ্ট হয়। দিনমজুরি করে কোনোভাবে জীবনযাপন করতে হয়। জেলেদের প্রতি সরকারের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।

ফিশারি ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, ‘ধারদেনা করে ব্যবসা করেছি। সাগরে ইলিশ মাছ পড়লেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুবিধা করতে পারিনি। তার মধ্যে পড়েছে আবার ২২ দিনের বন্ধ। এই অবস্থায় ব্যবসায় লাভ তো দূরের কথা, কোনোভাবে দেনা শোধরাতে পারব কি না সন্দেহ।’

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইলিশ আহরণে মন্দার কথাই জানালেন। তিনি বলেন, এবার মাছ পাওয়া যায়নি। ফলে জেলে ও বোট মালিকদের অবস্থা ভালো না। তাই মাছ ধরা বন্ধের সময়ে জেলেদের যথাযথ সহায়তা দেওয়া উচিত।

নিষেধাজ্ঞার সময় দেশের সমুদ্রসীমায় বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ চেয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের জেলেরা এই সময়ে সমুদ্রে যাবে না। কিন্তু বিদেশি মাছ ধরার জাহাজ ঠিকই সমুদ্রে যায়, মাছ ধরে। এরকম চললে নিষেধাজ্ঞা কাজে আসবে না। তারা মাছ ধরে নিয়ে চলে যাবে। তখন নিষেধাজ্ঞার পর আমরা সাগরে গেলেও মাছ পাব না। আমরা জেলে, বোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই দেশের সমুদ্রসীমায় যেন বিদেশি মাছ ধরার জাহাজ আসতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জলদস্যুর উৎপাত রোধ করতে হবে। নিরাপদ ও উন্মুক্ত সমুদ্র নিশ্চিত করতে পারলে তখন হয়তো নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে গেলে জেলেদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে ওঠা যাবে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, এই ২২ দিনেই ইলিশ বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ে। তাই এই সময় সমুদ্র উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পরবর্তী বছর ইলিশ বেশি পাওয়া যাবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ ২০২৩’ পালন করা হবে। একইসঙ্গে বন্ধের সময় বেকার হয়ে যাওয়া ২৪ হাজার ৪০ জেলে পরিবারের মধ্যে ৬০২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও সঠিকভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩’ শিরোনামে সোমবার (৯ অক্টোবর) সভা করেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মৎস্য অধিদফতর, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, র্যাবসহ অন্যন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকবে। এ ছাড়া জেলেদের জন্য বরাদ্দ চাল বিতরণে অনিয়মের খবর পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর