Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অতিবৃষ্টিতে এখনো তলিয়ে আমন ধান, উৎপাদনে শঙ্কা

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ অক্টোবর ২০২৩ ১০:১৭

পানিতে তলিয়ে গেছে আমনের ক্ষেত। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তোলা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: গত সপ্তাহের অতিবৃষ্টিতে দেশের উঁচু অনেক জমিতেও পানি জমেছে। পানিতে ভরে উঠেছে পুকুর। ডুবে গেছে মাছের ঘের ও ফসলি জমি। নিচু অনেক জমি থেকে এখনো সেই পানি সরেনি। এমন অবস্থায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে চলতি মৌসুমের আমন ধান। শঙ্কা দেখা দিয়েছে আমনের উৎপাদন নিয়েই।

কৃষকরা বলছেন, তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো ডুবে থাকা জমি থেকে বিন্দুমাত্র ফসল পাওয়া যাবে না। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, দেশের ১৮ জেলায় ১৯ লাখ হেক্টর আমন ধানের মধ্যে ৭৩ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। তবে এটি আমনের সামগ্রিক উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং সবমিলিয়ে এবার আমনের আরও ভালো উপাদনের প্রত্যাশা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদফতরের।

বিজ্ঞাপন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারিনি। এখনো বিভিন্ন জেলায় আমন ধান জলমগ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত ১৮ জেলায় ১৯ লাখ হেক্টর আমন ধানের মধ্যে ৭৩ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্তের তথ্য মিলেছে। সবজি আক্রান্ত হয়েছে ২৫০০ হেক্টর জমির। সবমিলিয়ে ওই ১৮ জেলায় ৭৬ হাজার ৫৬৯ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এই জলমগ্নতা আমন উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং শেষ সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় উঁচু জমিতে আমনের উৎপাদন খুব ভালো হবে। যেসব জমি আক্রান্ত হয়েছে, সবমিলিয়ে হয়তো ১৫ হাজার হেক্টর জমির আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি সামগ্রিক উৎপাদনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। সামগ্রিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’

বিজ্ঞাপন

অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৯ শতাংশ। অন্যদিকে এই মৌসুমে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং থেকে পাওয়া এক তথ্যে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ১৬ জেলায় আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি আক্রান্ত হয়েছে রংপুর, লালমনিরহাট, নাটোর, নীলফামারী, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, জামালপুর, নেত্রকোণা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, শেরপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ ও কিশোররগঞ্জ জেলা। আর আমন ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রীষ্মকালীন সবজি, মরিচ, পেঁয়াজ, মাসকলাই, চীনাবাদাম, ভূট্টা ও ফলবাগান।

তথ্যমতে, এই ১৬ জেলার মধ্যে আমন আবাদ হয়েছে ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমিতে, আক্রান্ত ফসলের জমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ২০৬ হেক্টর। আবাদ হওয়া ২৪ হাজার ৭৮৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৬৫৩ হেক্টর।

অন্যদিকে ১৬ জেলায় দুই হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া গ্রীষ্মকালীন মরিচের মধ্যে ৯৬ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। ১০৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে ৯ হেক্টর জমির। পাঁচ হাজার ৭২ হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া মাসকলাইয়ের মধ্যে ৪৩৩ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছে চীনাবাদামের দুই হেক্টর জমি, ভুট্টা ২৭ হেক্টর ও ফলবাগান ১১ হেক্টর। সবমিলিয়ে এই ১৬ জেলায় ১৬ লাখ ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২২ হেক্টর জমির মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৪৩৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল।

জানতে চাইলে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, উঁচু জমির পানি নেমে গেছে। তবে নিচু জমির ধান এখনো পানির নিচে। নিচু জমির সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আর যেসব জমি থেকে পানি নেমে গেছে, সেখানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমনের উৎপাদন এবার কম হবে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশি গ্রামের হিমেল সারাবাংলাকে বলেন, এবার তো টান এলাকাতেও বন্যা হয়ে গেছে। এখনো বেশিরভাগ জমি পানির নিচে। তিন দিন ধরে পানির নিচে ধান। আরও দুই দিন লাগবে পানি কমতে। ফলে ওইসব জমির পুরো ধানই নষ্ট হবে।

কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে এত বৃষ্টি হয়নি বেশিরভাগ এলাকায়। কেউ কেউ বলছেন, এটি স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদফতর থেকেও অনেক এলাকাতেই গত দুয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ডের কথা জানানো হয়েছে।

কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা বলছেন, এই অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে এমন অনেক জমিই তলিয়ে গেছে যেখানে আগে কখনো পানি ওঠেইনি। উঁচু এলাকার পুকুরও তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকার মাছের ঘেরের কথা তো বলাই বাহুল্য। আশ্বিনের শেষের দিকে এসে এমন অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি তাদের কৃষির জন্য যথেষ্টই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর