Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নভেম্বরেই খুলনা-মোংলা ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৩

ঢাকা: সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ সময়ে এসে প্রকল্প উদ্বোধনের এক রকম হিড়িক পড়েছে। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো প্রকল্প উদ্বোধন করা হচ্ছে। কোনোটির কাজ পুরোপুরি শেষ আবার কোনোটির আংশিক শেষ হতেই উদ্বোধন করা হচ্ছে। সেই পথ ধরে আগামী নভেম্বরে উদ্বোধন হবে দোহাজারী-কক্সবাজার এবং খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।

এর মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের উদ্বোধনের দিন ঠিক করা হয়েছে ১২ নভেম্বর। আর ৯ নভেম্বর উদ্বোধন হবে খুলনা-মোংলা রেল লাইনের। এই উদ্বোধনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, দুই প্রকল্পেরই কাজ শেষ, তাই উদ্বোধন করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প: বন্দর নগরী চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত একটি রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১১ সালে। ওই বছরের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। ২০১১ সালে ওই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজের তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে ওই প্রকল্পের যে সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়, সেখানে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। শুধু ব্যয়ই বাড়েনি মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে কয়েকবার। সেই সঙ্গে নকশা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও বদলেছে বহুবার। যে কারণে ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে গত প্রায় ছয় বছরে অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। বাকি কাজ আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা আরও জানান, আগামী ১২ নভেম্বর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। এরপর যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে দুই জোড়া ট্রেন পরীক্ষামূলক চালানো শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্প গ্রহণের সাত বছর পর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যে কারণে সময়টা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। আসলে কাজ শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। মাঝে কিছুদিন গেল করোনা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটারে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ।

সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের জন্য ৬টি বগি প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব বগিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। বগিতে মোট ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন দিয়ে ফার্স্ট ট্রায়াল হবে। সূত্র আরও জানায়, দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। এই ৮৮ শতাংশের মধ্যে যেসব কাজ শেষ হয়েছে তারমধ্যে ৩৯টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এছাড়া এই ১০০ কিলোমিটার রেলপথে মোট ৯টি স্টেশন থাকবে তারমধ্যে ৬টি স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি তিনটি স্টেশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পটি ধীরে বাস্তবায়ন হওয়ার কারণ হিসেবে কালুরঘাট সেতুর সক্ষমতাকে দুষছেন কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত মোট ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দ্রুত গতির টুরিস্ট ট্রেন চলাচল চালু করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। আপাতত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এখনি নির্মাণ হচ্ছে না।

খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প: সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ‘খুলনা-মোংলা রেল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্প। প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১০ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। মোট ৯১ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৮৬ কিলোমিটার লাইন বসানোর কাজ শেষ। আর ১১টি প্লাটফর্মের সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এ রেলপথে ১০৭টি ছোট-বড় সেতু ও ৯টি আন্ডারপাসের কাজও শেষ হয়েছে। রূপসা নদীর ওপরে সাতটি স্প্যানসহ ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রেলসেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান। এ পথে এখন পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করছে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। এখন রেলপথের ফিনিশিং, সিগন্যালিয় ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে মেয়াদ অন্তত পাঁচ বার বাড়ানো হয়েছে।

রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ একেবারেই শেষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সময় দিয়েছেন, আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা উদ্বোধন করবেন। দেশের প্রতিটি সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনা করেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত আমাদের প্রকল্প হাতে নেওয়া। আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এটিও আমরা নভেম্বরে উদ্বোধন করতে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি ভারতের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় বাস্তবায়ন করছে দেশটির প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। এতে খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

খুলনা-মোংলা রেললাইন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর