চওড়া হচ্ছে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরিদুল সড়ক
১২ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৪
ঢাকা: পটিয়া, দক্ষিণ বাঁশখালী ও চন্দনাইশের লাগোয়া আনোয়ারা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা। কর্ণফুলী সার কারখানা (কাফকো), চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল), কোরিয়ান ইপিজেড, পারকি সমুদ্র সৈকত, মেরিন একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব স্থান ও স্থাপনায় যাতায়াতের জন্য এই উপজেলার সড়কগুলো ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই সড়কগুলো প্রশস্ত নয়, মানসম্মত ও আধুনিকও নয়।
গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থানে যাতায়াত সুগম করতে উপজেলার সড়কগুলো আধুনিক ও চওড়া করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর জন্য ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরিদুল আলম সড়ক আনোয়ারা যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নতীকরণ’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
প্রস্তাবটি নিয়ে গত রোববার (৮ অক্টোবর) প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সভায় প্রকল্প প্রস্তাবনার বেশ কিছু অংশ নিয়েই নানা ধরনের পর্যবেক্ষণ রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের। কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বেশকিছু খরচের বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।
ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, পিইসি সভায় প্রকল্পটি নিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হলে পরে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় গাছবাড়িয়া থেকে চৌনাপাড়া পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ও চৌনাপাড়া থেকে শোলকাটা লাবীবা কনভেনশন হল পর্যন্ত ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে হল থেকে কালাবিবির দিঘির মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার এবং আনোয়ারা ফায়ার স্টেশন থেকে কালাবিবির দিঘীর মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৩৪৫ কিলোমিটার সড়ক জাতীয় মহাসড়কের মতো উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এই সড়কগুলো ১০ দশমিক ৩০ মিটারে উন্নীত করা হবে। এতে করে সড়কগুলো জাতীয় মহাসড়কগুলোর মান পাবে। আর এই সড়কটি এন-১১৫ সড়কের কালাবিবির দিঘীর মোড় থেকে গাছবাড়িয়া পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৪২৫ কিলোমিটার সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় প্রকল্পের লগফ্রেমের বিভিন্ন অংশ যথাযথভাবে পূরণ করা প্রয়োজন বলে পরিকল্পনা কমিশন মত দিয়েছে। কমিশন বলছে, প্রকল্পের ইনপুট ও আউটপুট আলাদা হতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যয় ও সময় কী পরিমাণ সাশ্রয় হবে, তা প্রকল্প প্রস্তাবে থাকা প্রয়োজন বলেও কমিশন মত দিয়েছে। তহবিলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত না হলে প্রকল্প নেওয়া যৌক্তিক হবে কি না, সেটি নিয়েও পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার রিজিড (আরসিসি) পেভমেন্ট নির্মাণ বাবদ ৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ব্যয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয় সভায়। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় তিনটি বাস-বে নির্মাণ বাবদ ৫৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা এবং তিনটি যাত্রী ছাউনি বাবদ ৪৩ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ব্যয় নিয়ে বিস্তারিত জানতে চায় পিইসি।
প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এক হাজার ৬৮০ মিটির আরসিসি ইউ-ড্রেন নির্মাণ বাবদ তিন কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ছয় হাজার মিটার আরসিসি ড্রেন-কাম-ফুটপাত বাবদ ২৬ কোটি ৪১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, চার হাজার ৩৯৫ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ বাবদ ৪৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ইউটিলিটি শিফটিং বাবদ ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় পিইসি সভায়। এগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যাও দিতে বলা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়, যাচাই কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য যৌথ জরিপ ও বিস্তারিত বিভাজন ডিপিপিতে থাকা প্রয়োজন। ডিপিপিতে উল্লিখিত মূলোৎপাটন ও বৃক্ষরোপণ অঙ্গ দুটির অনূকুলে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা ও ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে । এ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও সভায় প্রশ্ন তোলা হয়।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর