যশোরে রাজস্ব কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
১২ অক্টোবর ২০২৩ ১১:২৫
যশোর: কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা যশোর শহরের খড়কির নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল-আমিন বাদী হয়ে গতকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) মামলা দু’টি করেছেন।
নজরুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকা কাস্টম্স এক্সসাইজ ও ভ্যাট সুত্রাপুর সার্কেলে কর্মরত রয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি কাস্টম্স এক্সসাইজ ও ভ্যাট যশোরের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৯৪ সালে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পেয়ে কাস্টমস, এক্মসাইজ ও ভ্যাট, যশোর অফিসে যোগদান করেন। পরে তিনি ২০১২ সালে পরিদর্শক পদে চলতি দায়িত্ব লাভ করে বেনাপোলে কাস্টম হাউজে, খুলনার মোংলা কাস্টম হাউজ ও ঢাকা দফতরে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়ে রাজশাহী কাস্টমস, এক্মসাইজ ও ভ্যাট এবং সোনামসজিদ স্থল বন্দরে কর্মরত ছিলেন। নজরুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যিনি একজন গৃহিণী।
নজরুল ইসলাম ও সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি হয়। এরপর ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বরে তারা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদের বিবরণী যাচাই-বাছাই করে দুদকের কাছে উঠে আসে, নজরুল ইসলামের নামে যশোর সদর ও অভয়নগর এলাকায় ১০টি দলিলের মাধ্যমে ১১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বাগান ও ধানের জমি রয়েছে। এর দালিলিক মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯৯২ টাকা। এছাড়া ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯৯২ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য দুদকের সম্পদ বিবরণে দাখিল করেন তিনি।
অন্যদিকে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, যশোরে একটি একতলা বাড়ি, একটি দোকান ও ৩টি দলিলমূলে যশোরে ক্রয়কৃত ৪৭ দশমিক ৫ শতক জমিসহ মোট ১ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭১ হাজার ১৭৩ টাকার সম্পদের বিবরণ দাখিল করেন।
অর্থাৎ তারা উভয়ে দুদকে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৯ লাখ ২ হাজার ৬৭৩ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৫ টাকার সম্পদ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
কিন্তু দুদকের যাচাই-বাছাইয়ে তাদের নামে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৪৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৬১ লাখ ১৯ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া তাদের ঋণ ছিল ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৮ টাকা। সে হিসেবে তারা ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন।
এছাড়া, দুদকের অনুসন্ধানে নজরুল ইসলামের মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬ টাকা। তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮ টাকা। অপরদিকে তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের মোট আয় পাওয়া যায় ৬৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৯৯ টাকা। একই সময়ে তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ১৭ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ টাকা। দু’জনের মোট আয় এককোটি ৪১ লাখ ৪ হাজার ৭৬৫ টাকা। ব্যয় পাওয়া যায় ৫১ লাখ ১০ হাজার ৩৪ টাকা। ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদের মূল্য পাওয়া যায় দুইকোটি ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৩ টাকার। সে হিসেবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ পাওয়া য়ায় ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৮ টাকার, অর্থাৎ এ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পায়নি দুদক।
সে কারণে রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক আইন ২০০৪ ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় পৃথক দুই মামলা করে।
সারাবাংলা/টিএম/এনএস