আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১২ অক্টোবর ২০২৩ ২১:০৪
ঢাকা: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক যুদ্ধ থামতে না থামতেই ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনীদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই তাদের অনেক জায়গা দখল করে নিয়েছে। আমার অনুরোধ, এইগুলো বন্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ বন্ধ না করতে পারলে, এইভাবে অস্ত্রের খেলা বন্ধ করতে না পারলে সাধারণ মানুষই কষ্ট ভোগ করবে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় চামড়া খাতের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো’ বা ব্লিস-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মেলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, হংকং, ভারত, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কম্বোডিয়াসহ ১৫টি দেশের ক্রেতা, ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যান্ড প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই আমাদের মূল শক্তি। তারা আমাদের সাহসের উৎস। এই জনগণের একটা বড় অংশ কিন্তু শ্রমিক। বাংলাদেশের শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো- আপনার যদি সময় বেশি নেওয়ার প্রয়োজন হয় অনুরোধ করলে তারা কিন্তু সেটা শোনে। পৃথিবীর অন্য দেশে কিন্তু শ্রমিকদের ওই আট ঘণ্টা কাজ হলে আট ঘণ্টাই করবে। এর বেশি করবে না।’
তাই ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা শ্রম দেয় সেই শ্রমিকদের দিকেও আপনারা দৃষ্টি দেবেন। তাদের ভালো-মন্দ দেখা ও কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন সেগুলোও একটু দেখবেন। কারণ, আমি অন্তত এইটুকু বলতে পারি, আমার রাজনীতি এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনিত মানুষের জন্য। কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা যত বেশি প্রসারিত হবে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষই লাভবান হবে। সেজন্য আপনাদের কাছে এই অনুরোধটা করছি।’
বিনিয়োগ যাতে আরও আসে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা তো ব্যবসা বুঝি না। ব্যবসার ব-ও বুঝি না। কিন্তু আমরা ব্যবসাবান্ধব সরকার- এইটুকু দাবি করতে পারি। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন। আপনাদের কাজে সবধরনের সুবিধা আমাদের সরকার দিয়ে যাবে- সেটুকু কথা দিচ্ছি। আর আমি আগেই বলেছি, আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস, সেটা আমরা ইতোমধ্যে বিডাতে করে দিয়েছি। আরে সেইসঙ্গে খরচের দিকটাও আমাদের নজরে থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে আপনাদের ট্যাক্স, বিদ্যু-গ্যাসের বিলটাও যথাযথভাবে যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে। কারণ, সরকার সুবিধাটা দেবে। আর যদি উপার্জন করতে না পারে দেবে কী দিয়ে? সেটাও তো আপনাদের ভাবতে হবে।’ রফতানিকারকদের বিকাশ লাভের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নীতিমালার বৈষম্য দূর করে এই শিল্পকে আরও বেশি সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বলেও যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা কার্যকর করব। ইতোমধ্যে আমাদের প্রাইম মিনিস্টার অফিসে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে দিয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। কিছু সাব কমিটি করে দিয়েছি। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কী কী সুবিধা পাব, সেই সুবিধাগুলো আমরা কীভাবে নিতে পারি সেগুলো তারা দেখবে। পাশাপাশি কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অসুবিধা হতে পারে, সেক্ষেত্রে কিছু সময় বাড়ানো এবং কী কী সুযোগ কার্যকর করতে পারি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সরকারে আসার পর থেকে সেই নীতিমালা অনুসরণ করেই এগিয়ে যাচ্ছি। কাজেই বাংলাদেশের এখন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। এক্ষেত্রে যাতে আরও বিনিয়োগ আসে, আমরা যেন বেশি বেশি পণ্য রফতানি করতে পারি সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’
রফতানিকারকদের সমিতি লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম