মুজিব: একটি জাতির রূপকার চট্টগ্রামে
১৩ অক্টোবর ২০২৩ ২২:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সারদেশের মতো চট্টগ্রামের তিন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ছবি ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। প্রথমদিনে প্রেক্ষাগৃহগুলো মোটামুটি দর্শক পেয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সারাদেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের তিনটি প্রেক্ষাগৃহ হচ্ছে- নগরীর বালী আর্কেড মার্কেটের স্টার সিনে কম্পপ্লেক্স, কাজির দেউড়ির সুগন্ধা সিনেমা হল এবং ফিনলে স্কয়ারের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স।
তিন প্রেক্ষাগৃহের কর্মকর্তারাই জানিয়েছেন, বিভিন্ন বয়সী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য ভিড় করেছিলেন। তবে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল বেশি। প্রতিটি শো ছিল প্রায় হাউজফুল।
সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুপুর সোয়া ২টায় তাদের ৭২ আসনের হলে প্রথম সিনেমাটি প্রদর্শন করা হয়। সেটি ছিল হাউজফুল শো। এরপর সোয়া ৫টায় ভিআইপি হলে দেখানো হয়। ১৬ আসনের হলটিতে অবশ্য সমাগম তেমন ছিল না। রাত সাড়ে ৮টায় ৭২ আসনের হলে আরেকবার দেখানো হবে। বিকেল ৫টার মধ্যেই সেই শো’র সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
প্রেক্ষাগৃহটির ব্যবস্থাপক (অপারেশন) সালাহউদ্দিন পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব শো’তে আমরা আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। দর্শকের উপস্থিতি মোটামুটি ভালো।’
সুগন্ধা সিনেমা হলের স্বত্ত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন তিনটি করে শো আমরা রেখেছি। আজ (শুক্রবার) প্রথমদিনে আমাদের ২০০ সিটের হলে ভালো সাড়া পেয়েছি। প্রথম শো’তে অর্ধেকেরও বেশি সিট পূর্ণ ছিল। তবে শুক্রবার সাধারণত দর্শক সমাগম ভালো থাকে। শনিবারও মোটামুটি থাকে। রোববার খোলার দিনে বোঝা যাবে, দর্শকের সংখ্যা আদৌ কেমন হবে। অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিনগুলোতে যদি দর্শক সমাগম ভালো হয়, তখন বলা যাবে আসলে সিনেমাটি ভালো চলছে নাকি অন্য কিছু।’
স্টার সিনেপ্লেক্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের দুপুর এবং সন্ধ্যার শো দুটোই হাউজফুল ছিল। খুব ভালো সাড়া আমরা পাচ্ছি।’
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটির পরিচালক ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ ও ভারতের ৪০ শতাংশ ব্যয়ে নির্মিত এ বায়োপিকের শুটিং ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে শুরু হয়, আর শেষ হয় একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে। গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটির প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার ও ১৯ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেইলার রিলিজ করা হয়।
ভারতের অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়দির ইংরেজি চিত্রনাট্য থেকে আসাদুজ্জামান নূরের তত্ত্বাবধানে বাংলায় রূপায়িত এই ঐতিহাসিক সিনেমায় প্রায় দেড়শ চরিত্রের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি শিল্পী অভিনয় করেছেন।
মুম্বাইয়ের দাদাসাহেব ফিল্ম সিটি, গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়, বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ির আদলে সেট সাজিয়ে দৃশ্য ধারণ করা হয়। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। শেখ হাসিনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ অভিনয় করেছেন।
অন্যান্য চরিত্রে করেছেন দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ ও মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক অভিনয় শিল্পী।
স্টার সিনেপ্লেক্স ও সিলভার স্ক্রিনে দুপুরের প্রদর্শনী শেষে কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা চিত্রনাট্য, অভিনয় নিয়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র নাহিদ রিয়াদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য তো আমাদের হয়নি, শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে জাতির পিতার মতো মানুষকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করাও সম্ভব নয়। তবে মুজিব চরিত্রে আরিফিন শুভর আরও ভালো করার সুযোগ ছিল বলে মনে করি। শুনেছি, এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য উনি ৩-৪ বছর ধরে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তিশা দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা তোলার দৃশ্যে যে অভিনয় করেছেন সেটা পুরো সিনেমার মধ্যে বেস্ট মোমেন্ট।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র প্রীতম নন্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্যাম বেনেগালের মেকিংটা চমৎকার হয়েছে। তবে আরিফিন শুভ নিজেকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি।’
সংস্কৃতিকর্মী জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিনয় যেমনই হোক, মুজিবকে যদি ফিল করা যায়, তাহলে ছবিটা অসাধারণ হয়েছে বলতে হবে। কিছু কিছু দৃশ্য সাংঘাতিকভাবে টাচ করলেও বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশাল মাপের নেতৃত্বের বায়োগ্রাফি এটা হয়নি। যা’ই হোক, প্রথমবার এটা একটা সাহসী পদক্ষেপ হয়েছে। এটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এর পথ ধরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমরা আরও ভালো ভালো মুভি চাই।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএস