সনাতনী সংগঠনে রাজনৈতিক দলাদলি, আক্ষেপ নওফেলের
১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:২৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনে রাজনৈতিক দলাদলি নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে নিজ নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-৯ আসনের ১৩৫টি পূজামণ্ডপে অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী একথা বলেন। নগরীর ওয়াসা মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিটি মণ্ডপকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের উদ্দেশে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের বলতে চাই, আমাদের চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা আছে। এটা আজকের বিষয় নয়, অনেক আগে থেকে আছে। এক সময় আমাদের প্রয়াত নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কিংবা এস এম ইউসুফ- উনাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ছিল। আজ এখানে যারা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা আছেন, তাদের অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’
‘কিন্তু একটি বিষয় খুবই কষ্টকর যে, সনাতন ধর্মের সংগঠনগুলোতেও আওয়ামী লীগ কিংবা রাজনৈতিক দলের মতো নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ কাম্য নয়। রাজনীতি করতে গিয়ে কারও কারও মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ থাকতে পারে, কিন্তু সেই বিভাজন যখন ধর্মীয় সংগঠনে টেনে আনা হবে, তখন সার্বিকভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ধর্মীয় সংগঠনকে হতে হবে সার্বজনীন। বিভাজন টেনে আনলে সেই সার্বজনীনতা থাকবে না, তখন ধর্মীয় উৎসব আর সার্বজনীন উৎসবও হবে না।’
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরও বলেন, ‘কোনোকিছুই বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়গুলো একপক্ষীয় হওয়া কাম্য নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি একক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাস করি না। ব্যক্তিগতভাবে একক নিয়ন্ত্রণের কোনো উচ্চাভিলাস আমার অতীতেও ছিল না, এখনও নেই। আমার নামে ব্যানার, অমুকের নামে ব্যানার কিংবা তমুকের নামে স্লোগান- এসবে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি সেগুলোর মধ্যে থাকতে চাই না।’
‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে সার্বজনীন রাজনীতি করতে। সুতরাং সবাইকে নিয়ে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে, একা মানে বোকা। চারদিকে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে এ সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, এটা আমাদের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ। সবাইকে নিয়েই কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।’
দুর্গোৎসবের সার্বজনীন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খুব কম ধর্মীয় উৎসব আছে, যেখানে সন্ধ্যার পর ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে নারীরাও অংশগ্রহণ করে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে নারীরাও দেবীদর্শনের জন্য যান এবং উৎসবে অংশ নেন, এটা অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু আমরা যদি এসব উৎসবকে কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধের মধ্যে ফেলে দিই, তাহলে উৎসবটা নিরানন্দ হয়ে যাবে। নিরানন্দ পরিবেশে কোনো উৎসব হয় না। আবার আইনশৃঙ্খলার নামে যদি উৎসবের বিভিন্ন অনুষঙ্গ কঠোরভাবে বন্ধ করে দিই, তাহলে এটা আর উৎসব থাকবে না।’
‘গানবাজনা, ঢাকাঢোলের বাদ্য অবশ্যই হতে হবে। আবার ধর্মীয় অনুশাসনও মানতে হবে। আমাদের ইসলামের মধ্যে একটা ওহাবী ভাবধারা আছে। তারা কঠোরভাবে বিভিন্ন ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা বলে। কিছুদিন আগে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হল, সেখানে তারা এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না বলে নানা ধরনের বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করে। এভাবে কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো নিরানন্দ হয়ে পড়ে।’
যথাযথ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জনের সময় অবশ্যই শৃঙ্খলা মানতে হবে যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা অবশ্যই কাম্য নয়। এ জন্য নিজেদেরও সতর্ক থাকতে হবে।’
একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি সুযোগের সন্ধানে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রশিবিরকে কয়েকদিন আগে লাঠিসোঠা নিয়ে মাঠে নামিয়ে মহড়া দিল। দুর্গাপূজার আগে ভয়ভীতি দেখাতেই তারা মূলত এ মহড়া দিয়েছে। তারা চেষ্টা করছে কিভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করা যায়। সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বলতে চাই, আপনারা ভয় পাবেন না। এদের বিরুদ্ধে অতীতেও আমরা যখন রুখে দাঁড়িয়েছি তারা তখন লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। আপনাদের শুধু সচেতন থাকতে হবে, সবার চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আমরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।’
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক রাহুল দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, উপ-প্রচার সম্পাদক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহীদুল আলম, উপ-দফতর সম্পাদক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার সেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তপন দাশ।
এছাড়া নগর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, চসিকের কাউন্সিলর নুরুল হক, হারুনুর রশিদ হারুন, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, পুলক খাস্তগীর, নুরুল আলম মিয়া, নুর মোস্তফা টিনু, নীলু নাগ, লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী, রুমকি সেনগুপ্ত, শাহীন আক্তার রোজী, আঞ্জুমান আরা, নগর যুবলীগের অর্থ সম্পাদক মান্না বিশ্বাস, পূজা পরিষদের অর্পণ কান্তি ব্যানার্জি, বিপ্লব মিত্র, রাজীব দত্ত রিংকু, রিটু দাশ বাবলু, সজল দত্ত, বিপ্লব সেন, সুকান্ত মহাজন টুটুল এবং তপন দাশ বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ