Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রুগ্‌ণ শিক্ষার্থীদের সহায়তা তহবিলের অর্ধকোটি টাকা গায়েব!

আজাহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট
১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৩২

কুষ্টিয়া: দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য ফ্যাটাল ডিজিজ রিকভারি ফান্ডে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থেকে বছরে দুইশ করে টাকা নেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। তবে নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা তহবিলের প্রায় ৫৪ লাখ টাকার হদিস মিলছে না। পৃথকভাবে ব্যবহারের নীতিমালা থাকলেও সেভাবে ব্যবস্থাপনা না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় হিসেবে দেখিয়ে অন্য বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চালু করা এই তহবিলের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। উল্টো তহবিলের অর্থ গায়েব হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে কেউ বলছেন তিনি কিছুই জানেন না, কেউ আবার আক্ষেপ করছেন।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের দুই হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন বছরে জমা হয়েছে ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দুই হাজার ৪৩৪ জন শিক্ষার্থী থেকে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দুই হাজার ৫০৪ জন শিক্ষার্থী থেকে ৫ লাখ ৮০০ টাকা জমা হয়েছে। এতে এই চার শিক্ষাবর্ষ থেকে মোট জমা হয়েছে ৪৮ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া জানুয়ারির পর আরও ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬০০ টাকা জমা হয়েছে। ওই চার শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে মোট জমা হয় ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

তহবিল গঠন হলেও নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট না থাকায় এই চার শিক্ষাবর্ষের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অর্থ অন্যান্য ফির সঙ্গে একই একাউন্টে (হিসাব নং-১১৯৭২) নেওয়া হচ্ছে। ফলে বছর শেষে নিদিষ্টভাবে কোনো টাকা থাকছে না। পুরো অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় হিসেবে অন্য বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় হচ্ছে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৩০ জুন অগ্রণী ব্যাংক ইবি শাখায় একটি একাউন্ট (হিসাব নম্বর-১৩৭৭৫) খোলা হলেও আনুমানিক হিসেবে মাত্র ৯ লাখ ৯ হাজার ৬৬০ টাকা সেই অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বাকি ৫৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার হিসাব দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, নতুন অ্যাকাউন্ট থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু আবেদন থাকলেও সেগুলো মঞ্জুর হয়নি।

রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২৪২তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন পায় এই তহবিল। এতে অর্থ সংরক্ষণে কোষাধ্যক্ষকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। এ সময় করা নীতিমালা অনুযায়ী এ তহবিলে সংরক্ষিত টাকা অন্য তহবিলে কোনোভাবেই স্থানান্তরের নিয়ম নেই। দুই লাখ টাকার অধিক ব্যয় হলে সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সহায়তা পাবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।

আইন বিভাগের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী তৌফিক আহমেদ বলেন, ‘আমরা দাবি জানিয়ে ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করে এই তহবিল গঠনে কাজ করেছি। অথচ সেই টাকা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রুগ্‌ণ শিক্ষার্থীরা সহায়তা পাচ্ছে না। এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এ খাতে যত টাকা জমা হয়েছে সব তহবিলে জমা করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া সহায়তার ক্ষেত্রে নীতিমালার শর্ত আরো শিথিল করার প্রয়োজন।’

এই তহবিলের অর্থ সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার কাছে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। হিসাব শাখার পরিচালক বলতে পারবেন।’

অর্থ হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমাকেও বিব্রত করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের ন্যায্যপাওনা। আমি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই কয়েকবার নোট পাঠালেও সঠিক হিসাব পাইনি। সে সময় তহবিলটিতে আনুমানিক একটা টাকা স্থানান্তর করা হয়েছিল। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তির সময় নতুন অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়া হচ্ছে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আগে কীভাবে টাকা কোথায় গেছে সেটাও আমার জানা নেই। তবে বিষয়টা জানার পরপরই আলাদা অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছি। তবে যেই টাকাটা নিজস্ব আয় হিসেবে ইউজিসিকে দেখানো হয়েছিল সেটি ফেরত আনা অসম্ভব। আর এই বিষয়টা দেখভাল করার জন্য একটা কমিটি করে দিয়েছি। যেন পরবর্তীতে আর এমন না হয়।’

সারাবাংলা/একে

ইবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর