Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেধস আশ্রমে মহালয়া উদযাপনে দেবীপক্ষের সূচনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৪৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উপমহাদেশে শরৎকালে দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার মেধস আশ্রমে নানা সমারোহে মহালয়া উদযাপন করা হয়েছে। দেবীপক্ষের শুরুতে শনিবার (১৪ অক্টোবর) ভোরে ঢাকের বাদ্য, চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে আবাহন জানানো হয়। এসময় উলুধ্বনি-শঙ্খধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে আশ্রম অঙ্গন। মহালয়া উপলক্ষে চণ্ডীতীর্থে শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠ, চণ্ডীপূজা ও যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বী হাজারো ভক্তের সমাগম ঘটে।

দেশের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পুণ্যার্থীদের ভিড়ে দিনভর মুখর ছিল মেধস আশ্রম। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় আশ্রম প্রাঙ্গনে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

ভোরে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে মাঙ্গলিক আয়োজনের সূচনা করেন আশ্রমের পুরোহিত বুলবুলানন্দ। দুপুরে মহালয়া উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আমরা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীন স্বদেশ অর্জন করেছি। স্বাধীনভাবে স্ব-স্ব ধর্ম পালন, সমমর্যাদা, সমঅধিকার বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বর্তমানে সরকারের সময়ে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।’

উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটি যেন বজায় থাকে। সজাগ থাকতে হবে, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ যেন আর কোনোদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।’

চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বিপুল কান্তি দত্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলনের সঞ্চালনায় সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, বুলবুল মহারাজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার, জাতীয় পরিষদ সদস্য অধ্যাপক নারায়ণ কান্তি চৌধুরী, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন, বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছহাব উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ও কাজল কান্তি দে, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী কিষাণ, পৌর কাউন্সিলর সুনীল চন্দ্র ঘোষ, শ্যামল পালিত, শ্যামল বিশ্বাস, রাজীব চক্রবর্তী, পার্থসারথী চৌধুরী, সঞ্জয় দে, বিশুরাম বসু ও দীপন সর্ববিদ্যা বক্তব্য রাখেন।

বোয়ালখালী উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে মধ্যম করলডেঙ্গা গ্রামের করলডেঙ্গা পাহাড়ের চূড়ায় মেধস মুনির আশ্রম। সনাতন ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে আছে, ত্রেতাযুগে শরৎকালে রামচন্দ্র দুর্গাপূজা করেছিলেন। সত্যযুগে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল বসন্তে। কিন্তু শরতের সেই দুর্গাপূজা বা অকাল বোধন কলিযুগে উপমহাদেশে প্রচলন হয়েছে করলডেঙ্গার মেধসমুনি আশ্রম থেকে।

গবেষক সচ্চিদানন্দ রায় চৌধুরীর তথ্যমতে, ধার্মিক রাজা সুরথ শত্রুদের চক্রান্তে রাজ্য হারিয়ে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরতে ঘুরতে উপস্থিত হন মেধস মুনির আস্তানায়। মেধস মুনি রাজার দুর্দশা দেখে তাকে হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্গাপূজা করার উপদেশ দেন। মুনির উপদেশ মেনে সুরথ রাজা দুর্গাপূজা করেন। দেবী দুর্গার আশীর্বাদে তিনি শত্রুদের পরাস্ত করে আপন রাজ্য উদ্ধারে সক্ষম হন। সেই থেকে প্রচলিত হয় দুর্গাপূজা।

কিন্তু দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল মেধস মুনির আশ্রমের অবস্থান আজ থেকে ১৪০ বছর আগে বেদানন্দ স্বামী দৈবক্ষমতা দিয়ে জেনেছিলেন। সেই থেকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর করলডেঙ্গার পাহাড়ে সাড়ম্বরে মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা হয়, যার মধ্য দিয়ে এ আশ্রম উপমহাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

দুর্গাপূজা দেবীপক্ষ মহালয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর