ঢাকা: উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনপ্রাপ্তির পরও কয়েকজন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও), পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) সুরুজ উদ্দিন ও আসামিদের আইনজীবীকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২ নভেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
তবে উচ্চ আদালতের জামিন পাওয়া আসামিদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৫ অক্টোবর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান। পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
একটি ছিনতায়র মামলায় ৭ জন আসামিকে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন দেওয়া হয়। এই জামিন প্রাপ্তির পরও সাতজনের মধ্যে দুই জনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে নির্যাতন করে এবং তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আদালতে সোপার্দ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
আর জামিনের তথ্য যাচাইবাছাই না করেই আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিচারকের বিরুদ্ধে। পরে এ ঘটনায় পত্রিকার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এক আইনজীবী হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন। এরপর গত ১৩ জুন এ বিষয়ে হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে তলব করেন। একই সঙ্গে শরিয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আল ইমরানকে তলব করেন আদালত। পাশাপাশি পুলিশ কর্তৃক নির্যাতন চালিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশে গত ৬ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তারা আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ব্যাখ্যা দাখিল করেন। তখন আদালত বলেন, ‘নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করার সুযোগ নেই।’
একই সঙ্গে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরানকে তলব করেন হাইকোর্ট। ওই ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ২০ আগস্ট তাকে সশরীরে হাজির হতে বলেন আদালত।
এরপর ২০ আগস্ট শুনানি নিয়ে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করে দেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছিনতাইয়ের অভিযোগে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় করা মামলায় গত ২৯ মে কয়েকজন আসামিকে আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর আগাম জামিন সংক্রান্ত ল’ইয়ার্স সার্টিফিকেট দেখানোর পরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় শরীয়তপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আল ইমরান। পরে এ নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গত ৪ জুন আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এরপর ভুক্তভোগীর বড় ভাই আবু জাফর ঠাণ্ডু জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এরপর এ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ প্রশাসন।