কক্সবাজার রেললাইন: ২ নভেম্বর ট্রায়াল, ১২ নভেম্বর উদ্বোধন
১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনা মহামারি, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি জানিয়েছেন, ২ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এই রুটে পূর্ণাঙ্গ একটি ট্রেন চালানো হবে। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে রেললাইনের উদ্বোধন করবেন।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রেলমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়েছেন।
রেলমন্ত্রী প্রথমে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলসেতুর সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে দোহাজারী এলাকায় যান।
কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ট্রেন লাইন নির্মাণে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। করোনার সময় কাজে ব্যাঘাত হয়েছে। সর্বশেষ বন্যার সময়ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও আমরা কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তার আগে ২ নভেম্বর আমরা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ একটি ট্রেনের ট্রায়াল রান করবো।’
জরাজীর্ণ রেলসেতুটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক পুরনো ব্রিজ। ট্রেন চলে। আবার বিভিন্ন যানবাহনও চলে। আমরা এখানে আলাদা একটি লেইন করে দিচ্ছি। আগে মূল ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ হবে। এরপর ওয়াক ওয়ে’র কাজ শুরু হবে। সেটা চালু হতে আরও ২-৩ মাস লাগতে পারে। তবে তার আগেই মূল ব্রিজটা ট্রেন চলাচলের উপযোগী হবে।’
‘এছাড়া এখানে নতুন একটি ব্রিজ হবে। এটা এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং ফোর লেইনের সড়কসহ সেতু হবে। আগামী বছর কাজ শুরু হতে পারে।’
দোহাজারীতে পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখার জন্য এসেছি। কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। যেটুকু বাকি আছে সেটা ৩০ তারিখের (অক্টোবর) মধ্যে হয়ে যাবে। সিগন্যালিং সিস্টেমটা চালু হয়ে যাবে। ট্রেন চালানোর জন্য লাইনটা পুরোপুরি উপযোগী হয়ে যাবে। দু’য়েকটা স্টেশনের কিছু কাজ হয়তো বাকি থাকবে।’
ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী ট্রেন কতটি চলবে, মালবাহী ট্রেন এবং ভাড়ার বিষয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর নির্ধারণ করা হবে। তবে আমরা উন্নত যাত্রীবাহী কোচ দেয়ার বিষয়টি যাচাইবাছাই করছি।’
রেলপথের সুফল প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ বিমানে-সড়ক পথে কক্সবাজার যায়। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাবে। সারা দেশের মানুষের এই রেলপথ নিয়ে আগ্রহ, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময় সাশ্রয়ী নিরাপদ ও আরামদায়ক। এর জন্য এই প্রকল্প। যাত্রীরা আশা করি উপভোগ করবে। এই রেলপথটি ধরে মাতারবাড়িতে যে ডিপ সি পোর্ট করছি, তার সাথেও ভবিষ্যতে যুক্ত করব। কাজেই বহুবিধ ব্যবহারের জন্য এটা করা হচ্ছে।’
পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী মোটর ট্রলিতে করে দোহাজারী থেকে নতুন নির্মিত রেলপথ ধরে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১১ সালে। ওই বছরের ৩ এপ্রিল দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেলপথ ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরও ১২ কিলোমিটার।
২০১১ সালে ওই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। শুরুতে ডুয়েল গেজ ও সিংগেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। তবে কাজ শুরুর আগেই ২০১৬ সালে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের যেসব কাজ শেষ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৩৯টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। ১০০ কিলোমিটার এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ৯টি, এর মধ্যে ছয়টির নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ। বাকি তিনটি স্টেশনের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/আরডি/এমও